এইমাত্র
  • বিশ্ববাজারে সোনার দামে রেকর্ড
  • নিরস্ত্র ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর বালিচাপা দিল ইসরায়েলি সেনারা
  • ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার!
  • দিনে ৭৮ কোটির বেশি মানুষ অভুক্ত, অথচ নষ্ট হয় ১০০ কোটির খাবার: জাতিসংঘ
  • বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের
  • প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত
  • কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা
  • ‘বিএনপির নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কিনেন না’
  • ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
  • যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৩.৭ কিমি দৃশ্যমান
  • আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৮ মার্চ, ২০২৪
    অর্থ-বাণিজ্য

    বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে ৩ প্রতিষ্ঠানের আর্ন ওয়েজ সুদের ব্যবসা

    পলাশ মল্লিক, চিফ রিপোর্টার প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ০৩:৩০ পিএম
    পলাশ মল্লিক, চিফ রিপোর্টার প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ০৩:৩০ পিএম

    বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে ৩ প্রতিষ্ঠানের আর্ন ওয়েজ সুদের ব্যবসা

    পলাশ মল্লিক, চিফ রিপোর্টার প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ০৩:৩০ পিএম

    আর্নড ওয়েজ, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় অর্জিত মজুরি বা অর্জিত স্যালারি। আর এই অর্জিত মজুরি বা স্যালারির বিপরীতে ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে বিশ্বের উন্নত দেশের কর্মজীবি মানুষদের। উন্নত দেশগুলোতে এ ধরণের বৈধ আর্থিক সেবা বা টার্ম বহুল পরিচিত হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়গুলো একেবারেই নতুন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ছাড়া এ ধরণের কার্যক্রম চলমান থাকলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    জানা গেছে, দেশে অর্জিত মজুরির বিপরীতে তৃতীয় পক্ষের ঋণ সুবিধা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন অনুমতি বা বৈধতা না থাকলেও ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যা শুধু দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিই নই, বরং দেশের অর্থ পাচারের একটি মাধ্যমও হতে পারে আর্ন ওয়েজ ঋণ সুবিধা প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলো।


    সময়ের কণ্ঠস্বরের অনুসন্ধানে দেশের শিল্পকারখানায় অবৈধ ঋণ সুবিধা প্রদানকারী তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম ওঠে এসেছে। যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে চড়া সুদে শ্রমজীবিদের ঋণ দিয়ে আসছেন। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ওয়েজলি (Wagely), মিত্র (MITRO), ইজেড ওয়েজ (EZ WAGE)।

    উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম বর্হিঃভূতভাবে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো লামসাম ফি বা মেম্বার ফির নামে একটি বাড়তি অর্থনৈতিক সুবিধাও গ্রহণ করছে তাদের সেবা গ্রহনকারীর কাছ থেকে। এখানেই শেষ নয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ মালিকানার শেয়ার বিদেশীদের হওয়ায় টাকা পাচার এবং হুন্ডি ব্যবসার একটি ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া চলমান এই তিন প্রতিষ্ঠানের সুদের হারও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত বাৎসরিক সুদের হারের কয়েকগুণ বেশি।

    অন্যদিকে যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ রপ্তানীমুখী পোশাক শিল্প কারখানায় তাদের সেবাটি চালু করেছে তাই তারা ইচ্ছে করলেই শিল্পকারখানার মালিকের যোগসাজশে হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে

    অর্থনীতিবিদদের মতে, ওয়েজলি যে টাকাটা দেশের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের প্রদান করল সেই টাকাটা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে না নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকের যোগসাজসে বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে সে দেশে ওয়েজলির শেয়ার হোল্ডার বরাবর গ্রহণ করে, তাহলে দেশের টাকা দেশে আসার সুযোগ থাকবে না। এতে করে হুন্ডি ব্যবসার একটি নতুন ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।

    সময়ের কণ্ঠস্বরের অনুসন্ধানে আরও ওঠে আসে, উল্লেখিত তিনটি কোম্পানিই টেকনোলজি কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত, ফলে এ ধরণের ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার তাদের কোন অনুমোদন নেই। তাছাড়া এই কোম্পানিসমূহের অধিকাংশ মালিকানা বাংলাদেশের বাহিরে।

    এ ধরণের লেনদেনের বিষয়ে আর্ন ওয়েজ বা অর্জিত বেতনের বিপরীতে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েজলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর নুর এলাহীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, 'তারা এ ধরণের কোন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। মূলত তারা একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আইটি নিয়ে কাজ করছেন এবং তারা মূলত শ্রমিকদের কে কতদিন কাজ করেছেন এবং কার কত টাকা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা সে বিষয়টি অ্যাপের মাধ্যমে যেকোন প্রতিষ্ঠানের এইচআরকে সহযোগিতা করে থাকেন। ফলে প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ ঋণ সুবিধা নিতে চাইলে এইচআর ডিভিশন তাদের অ্যাপের মাধ্যমে তাদের কর্মঘন্টার বিপরীতে মাস শেষ না হলেও অগ্রিম অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে পারেন।'

    তবে বাস্তবচিত্র বলছে ভিন্ন কথা। কয়েক ব্যক্তির লেনদেনের স্ক্রিনশট সময়ের কণ্ঠস্বরের কাছে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের ২৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা ৪১ মিনিটে একজনকে ১০ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা প্রদান করেছেন এবং এই সেবা গ্রহণকারী ব্যক্তির কাছ থেকে মেম্বারশীপ ফি বাবদ ১০০ টাকা কেটে নিয়েছে ওয়েজলি।

    একই ব্যক্তিকে গতবছরের মে মাসে আবারও ১০ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি, যার বিপরীতে আবারও ১০০ টাকা মেম্বারশীপ ফি বাবদ নিয়েছেন। সেবা গ্রহণকারী ব্যক্তি গতবছরের জুলাই মাসের ১৭ তারিখে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ আবারও ঋণ সুবিধা গ্রহণ করায় ওয়েজলি তার কাছ থেকে ১০০ এবং ১২৫ টাকা মেম্বারশীপ ফি নিয়েছেন। এতে দেখা যাচ্ছে বার বার মেম্বারশীপ ফি এর নাম করে এক প্রকার আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছে ওয়েজলি। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ বিতরণের নীতিমালা নিয়ম বর্হিভূত।

    ওয়েজলি এই সুবিধা প্রদান করছেন মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমের। এ বিষয়ে বিকাশের আরএমজি পেরোল আসাদুন নবীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, 'ওয়েজলির সাথে আমাদের কোনপ্রকার পার্টনারশীপ চুক্তি হয়নি, আমরা তাদের সাথে কাষ্টমার শেয়ারিং করে থাকি।'

    চুক্তিপত্র সম্পাদনের জন্য যে ধরণের কাগজপত্র লাগে সেগুলো তাদের না থাকায় ওয়েজলির সাথে বিকাশ অফিসিয়ালভাবে পার্টনাশীপ চুক্তি করেনি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

    এদিকে অর্জিত মজুরি বা স্যালারির বিপরীতে ঋণ সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান 'মিত্রের' ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিশোয়ারের কাছে তাদের কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে ঋণ দেওয়ার কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও বলেন, 'বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরণের সেবা চালু আছে। আমরা প্রাথমিকভাবে শুরু করে সাড়া পাচ্ছি।'

    যাদেরকে এই সেবার মাধ্যমে টাকা দেওয়া হচ্ছে এই টাকা প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে নাকি আপনারা দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে আমরা দিচ্ছি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে। এই সেবা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘না’ বলেন।

    অন্যদিকে আরেক প্রতিষ্ঠান 'ইজেড ওয়েজ'র হেড অব অপারেশন শিউলী আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, তারা বর্তমানে অর্জিত মজুরি বা স্যালারির বিপরীতে ঋণ সুবিধা দিচ্ছেন। অ্যাপের মাধ্যমে তারা যে প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের ঋণ সুবিধা দিচ্ছেন সেই টাকা প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে নাকি আপনারা দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তারা দিচ্ছেন, পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হচ্ছে।

    এ ধরণের ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারা কোনো অনুমোদন নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। বলেন, এ বিষয়ে বলতে হলে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কথা বলবো। আপনাকে জানাবো কেন আমার অনুমতি আছে কিনা।

    সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জি এম রফিকুল ইসলাম সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, চাকরিজীবীরা তার নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত মজুরীর বিপরীতে ঋণ সুবিধা নিতে পারলেও তৃতীয় পক্ষের কেউ সেই প্রতিষ্ঠানে অর্জিত মজুরীর বিপরীতে ঋণ সুবিধা দিতে পারবে না।

    উল্লেখিত তিনটি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ মালিকানা দেশের বাহিরের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সেক্ষেত্রে মানি লন্ডারিংয়ের কোন সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অব্যশই আছে। তিনি অভিযোগ পেলে এ ধরণের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান।

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…