ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় টিউবওয়েল চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চাপলডাঙ্গা গ্রামে।
এ ঘটনায় নির্যাতনের একটি ভিডিও গত বুধবার দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। শিশু নির্যাতনের দায়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের ভাই নজরুল শেখ নামে একজনকে পুলিশ আটক করে বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) দুপুরে ফরিদপুর আদালতে পাঠিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখের বড় ভাই নজরুল শেখের একটি টিউবয়েল সম্প্রতি চুরি হয়। এ ঘটনার জের ধরে ইউপি সদস্য মো. নাজমুল শেখ (৩৯), তার ভাই নজরুল শেখ (৪৩) ও একই গ্রামের হাসান খন্দকার (৩৫) নামে তিন ব্যক্তি স্যালোমেশিনের টিউবওয়েল চুরির অপবাদে সুমন শেখ (৯) এবং সৌরভ আলী (১০) নামে দুইটি শিশুকে পায়ে শিকল বেঁধে গত মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে স্থানীয় নাজমুল মেম্বারের উত্যপ্ত ধানের চাতালে কাঠের বাটাম ও বাঁশের লাঠি দিয়ে শুইয়ে বেধড়ক পিটানোর ঘটনা ঘটে। সুমন শেখ ওই ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামের খাঁ পাড়া এলাকার দরিদ্র রিক্সাচালক মিন্টু শেখের ছেলে। সুমনের বাবা মিন্টু শেখ ঢাকায় রিক্সা চালায়। নির্যাতিত সুমন গ্রামের বাড়িতেই দাদা-দাদির সাথে বসবাস করে।
অপর শিশু সৌরভ আলী একই ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক আলীবর শেখের ছেলে। তবে নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না ভুক্তভোগী ওই পরিবার। এমনকি এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিতে ভয় পাচ্ছে বলে জানা গেছে।
নির্যাতিত সুমন শেখের চাচা মিরাজ শেখ জানান, নাজমুল মেম্বারের ভাইয়ের স্যালোমেশিনের টিউবওয়েল চুরির ঘটনায় রাস্তা থেকে সুমন ও সৌরভকে ধরে নিয়ে দুপুরে তীব্র রোদে পায়ে শেকল বেঁধে গরম চাতালের মেঝেতে খালি গায়ে শুইয়ে রেখে নির্যাতন করেছে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ভয়ে চুরির কথা স্বীকার করে ওই দুই শিশু। এ ঘটনার খবর পেয়ে আমার বাবা সিরাজ সেখ ও সৌরভের বাবা আলিবর শেখ গিয়ে শিশু দুটিকে নির্যাতনের কবল থেকে উদ্ধার করে। মেম্বারের ভাই প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কিছু করা যাবে না। তাই অভিযোগ দেয়নি!
ভুক্তভোগী সুমন শেখ জানায়, প্রতিবেশী একজনের সাথে জাম বিক্রির জন্য বোয়ালমারী বাজারে যাচ্ছিলাম। এসময় নাজমুল মেম্বারের ভাই নজরুল ভ্যান থেকে আমাকে নামিয়ে তাদের বাড়ির ধানের চাতালে নিয়ে পায়ে শিকল বেঁধে শোয়াইয়া রাখে। এ সময় আমার পায়ের তলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন চালায় তারা। এক পর্যায়ে আমাদের দুইজনের গলায় ফাড়া বাঁশ দিয়ে চেপে ধরে রাখে। ভয়ে আমরা দুইজনই চুরির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হই।
নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য মো. নাজমুল শেখের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপর নির্যাতনকারী চাপলডাঙ্গা গ্রামের আইয়ুব খন্দকারের ছেলে হাসান খন্দকারের বাড়িতে গিয়ে না পাওয়ায় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিকদের কথা শুনে তিনি ফোনটি কেটে দেন।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেলে এ ব্যাপারে গুনবহা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম জানান, কিছুদিন ধরেই ওই এলাকার কিছু বাড়ি ও মাঠ থেকে টিউবয়েল হারিয়ে যাচ্ছে। গত দুইদিন আগে নাজমুল মেম্বরের ভাইয়ের একটি টিউবয়েল চুরি হয়। শুনেছি ওই ছেলে দুটিই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের কাছ থেকে টিউবয়েলের হাতল উদ্ধার করা হয়। মেম্বরের ভাই শিশু দুটিকে ধরে এনেছিলো। পরবর্তীতে শিশুর অবিভাবকরা শাসন করে নিয়ে তাদের নিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, 'এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছিলো। কিন্তু কারো কোন অভিযোগ না থাকায় মামলা হয়নি। শিশুদের অভিভাবকদের কোন অভিযোগ না থাকায় ধর্তব্য অপরাধ সংঘঠনের দায়ে আটককৃত ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পিএম