টানা ছুটিতে কক্সবাজার সাগরতীর জুড়ে মানুষ আর মানুষ। নোনাজলে সব বয়সের মানুষ মেতেছে আনন্দ আর উল্লাসে। প্রিয়মুহুর্তগুলো পার করছেন প্রিয়জনের সঙ্গে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আজ শুক্রবার সারাদিন সমুদ্র সৈকতের কক্সবাজার শহর ও শহরতলী সংলগ্ন ৪ কিলোমিটার বেলাভূমি পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।
বিশেষ করে লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। একই সঙ্গে ইনানী, পাটুয়ারটেক, দরিয়ানগর, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দিরসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটেও ছিল পর্যটকের ভিড়।
কুমিল্লা থেকে আসা রফিকুল আলম বলেন, দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজারে অনেক পর্যটন স্পট উন্মুক্ত। তাই বরাবরের মতোই প্রকৃতির ইশারায় কক্সবাজার চলে আসে ভ্রমনপিপাসু মানুষ। এবার বাচ্চাদের নিয়ে ৩ দিনের ছুটিতে এসেছি। ভালো লাগছে।
সকালে সরজমিনে দেখা যায়, সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টেরে প্রবেশদ্বার সেজেছে রঙিন ছাতায়। সৈকতের প্রবেশের শুরুতেই মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। রঙিন ছাতার নিচে তুলছেন ছবি।
সৈকতের বালিয়াড়িতে দৌড়াচ্ছে ঘোড়া, আর এসব ঘোড়া পিঠে চড়ে ঘুরছেন ভ্রমণপিপাসুরা। আবার ঘোড়ার পিঠেও ছবি তুলছেন শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ। তবে টানা ছুটিতে সবচেয়ে বেশি উল্লাস সাগরের নোনাজলে। মেতেছে সমুদ্রস্নান আর জেডস্কিতে চড়ে। ভ্রমণপিপাসুরা বলছেন, প্রশান্তির খোঁজে সাগরে ছুটে আসা।
দুবাই প্রবাসি শিহাব করিম বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশে এসেছি। এখন পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। এখানে সৈকতে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি পর্যটন মেলা হচ্ছে পরিবার নিয়ে খুব আনন্দ করছি। বিশেষ করে, সৈকতের প্রবেশদ্বারে রঙিন ছাতাগুলোতে ছবি তুলে খুবই ভাল লেগেছে।
দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক আকরাম হোসেন বলেন, চাকুরি জীবনে খুবই কম ছুটি পাওয়া হয়। এবার টানা ৩ দিনের ছুটিতে একটু প্রশান্তি খোঁজে কক্সবাজার ছুটে আসে।
জানতে চাইলে আবাসিক হোটেল রিগ্যাল প্যালেসের স্বত্বাধিকারী মো. আরকান বলেন, টানা ৩ দিন সরকারি ছুটি। এরপরও পর্যটন মেলার শেষ পর্যন্ত হোটেলে কোনো রুম খালি নেই।
এদিকে সাগরে বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। ঢেউয়ের মাত্রাও বেড়েছে। তাই সবকটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। তবে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে লাইফ গার্ড সংস্থা।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, টানা ছুটি ও পর্যটন মেলাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সৈকতে এখন লাখো পর্যটক। তাদের অধিকাংশই কিন্তু সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। এখন তাদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে হিমহিশ খেতে হচ্ছে। তারপরও পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, চেষ্টা করছি পর্যটকদের সব্বোর্চ নিরাপত্তা দেয়ার।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক আয়ুব আলী বলেন, চারদিকে নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে।
টানা ৩ দিনের ছুটিতে কক্সবাজারের ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজ পর্যটকে ভরপুর। আর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল শুরু করায় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও পর্যটকরা ভ্রমণ করছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যটকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।