খাদ্যে বিষক্রিয়া আসলে বেশ বড় এবং বিস্তৃত একটি ধারণা। এটা যেহেতু খাবার খাওয়া বা পান করার কারণে হয় তাই এটি বিভিন্ন ধরণের এবং বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খাবারে বিষক্রিয়া সাধারণত মারাত্মক আকার ধারণ করে না এবং সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ভালও হয়ে যায়।
খাদ্যে বিষক্রিয়া কখনো হয় বিভিন্ন ধরণের জীবাণুর কারণে, অনেক সময় খাবারে বিষাক্ত উপাদান থাকার কারণে আবার অনেক সময় দৈহিক সমস্যা যেমন অ্যালার্জি থাকলে কিংবা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে।
সাধারণত রাস্তা বা হোটেলের বাসি-পচা খাবার, অস্বাস্থ্যকর, জীবাণুযুক্ত খাবার, অনেকক্ষণ গরমে থাকার ফলে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার খেলে ফুড পয়জনিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বন্যার সময় পানীয় জলের অভাব, হাওর-বিল-বাঁওড়ের পচা মাছ খাওয়ার কারণে ফুড পয়জনিং জটিল আকার ধারণ করে। এ অবস্থাকে আমরা পেটের পীড়া বলে থাকি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যদি কোনো খাবার খেয়ে বারবার বমি, পাতলা পায়খানা, জ্বর, পেট ব্যথা শুরু হয় তাহলে তাকে ‘ফুড পয়জনিং’ বলে। ছোট-বড় সবাই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে খাবার স্বাস্থ্যসম্মত থাকলেও যেসব পাত্রে পরিবেশন করা হয় তা অপরিষ্কার থাকায় জীবাণুমুক্ত হয় না। এসব পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হলেও ফুড পয়জনিং হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দ্বারাও ফুড পয়জনিং হতে পারে। তবে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ যাই হোক না কেন লক্ষণগুলো অনেকটা একই থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'খাদ্য থেকে উদ্ভূত অসুস্থতা'কে সংজ্ঞায়িত করে এভাবে- "এমন একটি রোগ যা সংক্রামক বা বিষাক্ত প্রকৃতির এবং এটা এমন জীবাণুর মাধ্যমে হয় যা খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে।"
ফুড পয়জনিং হলে সাধারণত পেটে ব্যথা, হজমে সমস্যা, ডায়রিয়া, বমি অনেক ক্ষেত্রে জ্বর হতে পারে। অনেক সময় ফুড পয়জনিং ও ডায়রিয়া আলাদা করা যায় না।
চিকিৎসা
ফুড পয়জনিং হলে প্রথমত খাবার-দাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে নরম খাবার দেওয়া ভালো। এ ছাড়া লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া উচিত। বমি ও পাতলা পায়খানা হলে খাবার স্যালাইন দেওয়া যায়। পাশাপাশি ফুড পয়জনিংয়ের তীব্রতা অনুযায়ী উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা জীবাণুনাশক ওষুধ সেবন করলে দ্রুত ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি নিরাময় লাভ করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে এক ধরনের টক্সিন (অ্যানথ্রাক্স, বোটুলিমিনাস টক্সিন) থেকেও ফুড পয়জনিং হতে পারে। সময়মতো এ রোগের চিকিৎসা করা না হলে শরীরে তীব্র পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এ থেকে রোগীর কিডনি অকেজো হয়ে পড়তে পারে; যা কিনা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
রাস্তার খোলা খাবার খাবেন না। পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। বাসন-কোসন ভালোভাবে ধুতে হবে। খাওয়ার আগে হাত ভালো করে ধুতে হবে।
দুধ, কলা, ফলমূল বেশি দিন পুরোনো হয়ে গেলে খাবেন না। গরমের সময় হোটেলের খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কেননা, অনেক হোটেলেই স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টিতে লক্ষ্য রাখা হয় না। যতটা সম্ভব টাটকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কয়েকদিন ধরে ফ্রিজে রাখা খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
খাবার ঠিকমতো ঢেকে রাখুন, নয়তো বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খাবারে বসে জীবাণু ছড়াতে পারে।
এবি