সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকারের নির্বাহী আদেশ বলে বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দল ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’এর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকার ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেশে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালায়। সরকারের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিশ্বসম্প্রদায় এই গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’কে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবতার কল্যাণে জামায়াত ভূমিকা পালন করেছে। দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জামায়াত। দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য প্রতিটি নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে ও নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। জামায়াতের দুজন মন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিচালনায় সততা, নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। বন্যাসহ দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জামায়াত সবসময়ই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির উদ্ভাবক জামায়াতে ইসলামী। এই কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে পরপর তিন বার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে ভূমিকা পালন করেছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় জামায়াতের ছয়জন নেতাকে জঙ্গিদের বোমা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে। জামায়াতের সাথে সন্ত্রাসবাদ ও নৈরাজ্যবাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
শফিকুর রহমান বলেন, সরকার বিগত ১৬ বছর যাবত জামায়াতের উপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে। জামায়াত ধৈর্যের সাথে সকল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। ফলে জামায়াতের প্রতি মানুষের সহানুভূতি, ভালোবাসা ও সমর্থন বেড়েছে। জামায়াত কোটি কোটি মানুষের সংগঠন। বাংলাদেশের সংবিধান সকল নাগরিকদের সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। সরকার ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা সরকারের এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জামায়াতের আমির বলেন, সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেই জামায়াতে ইসলামীর মূল কাজ ইসলামের দাওয়াত, মানুষের চরিত্র সংশোধন ও ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ কখনো বন্ধ হবে না। আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল স্তরের জনশক্তিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকার দেশে গণহত্যা চালিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দোষ চাপানোর যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তদ্রুপ সরকার বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে জামায়াতের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাতে পারে। এই ব্যাপারে দেশবাসী সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে। যুগে যুগে ইসলামের ওপর কোনো আঘাতই এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। বর্তমান সরকারসহ কারো আঘাতেই ইসলামী আন্দোলন স্তব্ধ হবে না, ইনশাআল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরকারের গণহত্যা, মানুষের অধিকার হরণ, জুলুম-নিপীড়ন ও ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’কে নিষিদ্ধ করার অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ, প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন এবং বিশ্ববিবেককে বাংলাদেশের ডামি সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
এমএইচ