চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আমন ধানের চারা রোপনের পাশাপাশি চলছে আউশ ধান কাটার মহোৎসব। আউশ ধান কর্তন, মাড়াই ও ধান সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষক-কৃষানিরা।
উপজেলার খাগরিয়া, চরতী, কাঞ্চনা ও সোনাকানিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার পরপরই আউশ ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা।
একদিকে চলছে ধান কর্তন অপরদিকে চলছে মাড়াই ও ধান সংগ্রহের কাজ। আবার অনেক কৃষক আউশ ধান কর্তনের পর একই জমিতে আলু রোপনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এ অঞ্চলে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে কৃষকরা আলু রোপন শুরু করেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলাজুড়ে ১২৮৫ হেক্টর আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫ হেক্টর বেশি আউশ ধানের চাষাবাদ হয়েছে। তারমধ্যে ৪২.৮ হেক্টর আউশ ধান অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৩৪৪ জন কৃষক ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
আরও জানা যায়, আবাদ হওয়া ১২৮৫ হেক্টর আউশ ধানের মধ্যে ৩৫০ হেক্টর হাইব্রিড জাতের ধান ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬.৪ টন/হেক্টর। অপরদিকে ৯৮৫ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫ টন/হেক্টর।
উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের কৃষক নূর মোহাম্মদ বলেন, এ বছর ৮০ শতক জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছি। শুরুর দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতক জমির আউশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২০ শতক জমিতে এখনো পানি থাকায় কাটতে পারছি না।
চরতী ইউনিয়নের কৃষক জালাল আহমদ জানান, আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে তবে শ্রমিকের মজুরি তুলনামূলক বেশি। তাছাড়া জমির একাংশের ধান অতিবৃষ্টির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছে। তবুও একই জমিতে আলুর আবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোনাকানিয়া ইউনিয়নের আউশ চাষী ফজল করিম বলেন, চলতি বছর বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম নাগালের মধ্যে থাকায় ব্যয় কম হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে চাষাবাদ করায় ফলনও ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও একই জমিতে উফশী জাতের আলু চাষ করবো।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আউশ ধানের আশাতীত ফলন হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের চাইতে খাগরিয়া, চরতী ও কাঞ্চনা ইউনিয়নে তুলনামূলক বেশি আউশ ধান আবাদ হয়। ইতোমধ্যে ১০% আউশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে আউশ ধান কর্তনের আগে অতিবৃষ্টির ফলে কিছু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের লাভজনক ফসল চাষাবাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এমআর