বর্তমান বিশ্বে যেকোনো কন্টেন্ট কিংবা সিনেমা প্রচারের জন্য শিল্পী বা নির্মাতাদের আধুনিক উপায় ব্যবহার করে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রি যেন হাঁটে উল্টোপথে। কেউ কেউ এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ব্যবহার করছেন অপকৌশলে। কেউ কেউ বোন হারিয়ে গেছে বলে রাস্তায় নেমে ফেসবুক লাইভ করে, আবার কেউ মধ্যরাতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লাইভে এসে কান্নাকাটি করে। আবার কেউ কেউ প্রচারণা করতে গিয়ে অন্যের নামে গীবত গাইতে শুরু করে, যেগুলোতে রীতিমতো দর্শক এমনকি সাধারণ মানুষও বিরক্ত। অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা নাটক-সিনেমা সংশ্লিষ্টদের এ রকম কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রচারণায় তাদের ওপর বিরক্ত দর্শকসহ সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ওয়েব ফিল্মের প্রমোশনের লাইভ করেছিলেন দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। যেখানে ভক্ত অনুরাগীদের আবেগ নিয়ে খেলা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যার ফলে ব্যাপক রোষানলের শিকার হয়েছেন এ অভিনেত্রী।
ক'দিন পর পর এ রকম প্রচারণায় মেতে ওঠেন শোবিজের অনেক তারকা। প্রচারণার নামে জনমনে এভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা নিয়ে খেপেছেন অনেকে।
কেউ কেউ বলছেন, নিজেদের লাইম লাইটে আনার জন্য ইদানীং শিল্পীরা খুবই সস্তা কৌশল ব্যবহার করছেন। এমন প্রচারণায় বিভ্রান্তি তৈরি করায় কেউ কেউ আবার তাদের শাস্তি দাবি করছেন। শোবিজ অঙ্গনের এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন কার্যকলাপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে লক্ষ করা গেছে সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ বলছেন নিজের ও নিজের কন্টেন্টের প্রচারণার জন্য দর্শকের আবেগ নিয়ে এরা খেলা করতে পারে না। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করলে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জনপ্রিয়তা হারাবে। দর্শক তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। নাটক সিনেমার প্রচারণা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে সময়ের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে কথা বলেছেন শোবিজ অঙ্গনের কয়েকজন তারকা।
অভিনেত্রী রিচি সোলায়মান বলেন, 'কন্টেন্ট মার্কেটিং করার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে। আমার প্রশ্ন প্রডাকশন হাউজ সাদিয়াকে এমন কাজ করতে বলবে কেন? তারা কি ইন্টারনেট দেখে না, সারা বিশ্বের যেসব সিনেমা হচ্ছে সেসবের প্রচার-প্রচারণা কীভাবে করছে? তাদের প্রচারণা কি এভাবে হয়? তারা কি জানে না, দেখে না? সিনেমা মার্কেটিংয়ের এটা সঠিক পদ্ধতি না। সাদিয়া আয়মান একটা ম্যাচিউরড মেয়ে। তাকে বলল আর করে ফেলল। একজন শিল্পী হিসেবে তার কোনো দায়ভার নেই? সে কেন এটা করবে? তাকে বললেই সেটা করবে? তাকে এটা বুঝতে হবে যে, আমি একজন শিল্পী। শিল্পীদের সবকিছু করতে হয় না, বলতে হয় না, সব কিছু খেতে হয় না, সব জায়গায় যেতে হয় না। আমি যতটুকু বুঝি সাদিয়া ছোট মানুষ, বয়সে অল্প। তারপরও আমি মনে করি এসব ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত। হুটহাট করে মাথায় যা এল করে ফেললাম, আমার সামাজিক কোনো দায়িত্ব থাকবে না? আমার পরের জেনারেশনকে আমি কী দিয়ে যাচ্ছি? কী শিখাচ্ছি? সাদিয়ার ভিডিওটা আমি অর্ধেক দেখেছি, এটা আমার কাছে সস্তা মার্কেটিং মনে হয়েছে। খুব দুঃখ হয়েছে যে আমার ইন্ডাস্ট্রি কোথায় নেমে গেছে, আমাদের এগুলো করতে হয়।'
কন্টেন্টের প্রচার নিয়ে রিচি সোলায়মান বলেন, 'বৃক্ষ তোমার নাম কী ফলে পরিচয়। পৃথিবীতে মার্কেটিং করার বা ভাইরাল হওয়ার অনেক পদ্ধতি আছে, মানুষকে জানান দেয়ার জন্য অবশ্যই পজিটিভ ওয়েতে মার্কেটিং করতে হবে। এমন কোনোভাবে কনটেন্টের প্রচার করা যাবে না যে যেটা শিল্প ও শিল্পীদের প্রতি একটা নেগেটিভ ধারণা আসে।'
বিষয়টি নিয়ে অভিনেত্রী ফারজানা চুমকি বলেন, 'আসলে সাদিয়ার ভিডিওটা আমি দেখিনি, তবে আমাকে একজন বলেছে। সাদিয়ার ব্যাপারটা যা করেছে এটা মানুষ সত্যি সত্যি ভেবে নিয়েছে। ভিডিও শেষে আর বলেনি যে এটা নাটকের প্রচারণা ছিল। প্রচারের ক্ষেত্রে প্রথমে দর্শককে একটা ধাক্কা লাগাল ঠিক আছে। কিন্তু শেষে তো বোঝাতে হবে যে এটা নাটকের দৃশ্য ছিল। না হলে তো মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। যদিও সাদিয়া পরে সরি বলেছে, তবে প্রচারের জন্য এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কাজ না করাই উচিত।'
প্রচারণার কৌশল নিয়ে তিনি বলেন, 'সাদিয়া যা করেছে শুরুটা ঠিক ছিল। তবে ভিডিওর শেষে বলা দরকার ছিল যে এটা আমার একটা নাটকের দৃশ্য, আপনারা নাটকটা দেখবেন। এছাড়া আরো অনেক মাধ্যম আছে প্রচারণা চালানোর।'
এ ব্যাপারে অভিনেত্রী মনিরা আক্তার মিঠু বলেন, 'সাদিয়া যেভাবে তার সিনেমার প্রচার করতে চেয়েছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল। সাদিয়া একজন সহজ-সরল মেয়ে। চার বছর প্রায় মিডিয়ায়, সে তো এখানে নতুন, তাছাড়া ওর বয়সই বা কত। আমরা ২২ বছর আছি এ জগতে, আমরাই অনেক কিছু বুঝি না। তাকে দিয়ে যারা এমন কাজটি করিয়েছে, তারাই এজন্য দায়ী। এটা অত্যন্ত অন্যায় করা হয়েছে মেয়েটির সঙ্গে, কারণ ক্ষতি হয়েছে মেয়েটির।'
প্রচারণা কেমন হওয়া উচিত নিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা সাধারণত মুক্তির আগে সিনেমার ক্ষেত্রে টিজার দিই। এছাড়া যদি কেউ লাইভে এসে কিছু বলতে চায়, তাহলে পরিচালকসহ নায়ক-নায়িকারা বিভ্রান্তিমূলক পদ্ধতি গ্রহণ না করে সুন্দরভাবে প্রচারণা চালাতে পারেন।'
এ নিয়ে অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ বলেন, 'প্রচারণার বিষয়ে বলব যে প্রচারণা যেকোনো ভাবে হতে পারে। দেশের বাইরে এখন অনেক ধরনের প্রচারণা হয়। একবার এমনটা হয়েছিল যে জয়া আপাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এ টাইপের একটা ক্যাম্পেইন হয়েছিল। অতএব এটা এমন না যে নতুন কোনো প্রচারণার পদ্ধতি। এমন আগেও হয়েছে এবং সারা বিশ্বে এমনটা হচ্ছে। এখন এটা কে কীভাবে করবে, বিষয়টা ওই সিনেমা সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, এটা একান্ত তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। যাদের জন্য সিনেমাটি করেছে, তারা ব্যাপারটি নিয়ে কীভাবে ভেবেছে, এটা তারা ভালো বুঝবে। তবে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন আর্টিস্ট বিভিন্নভাবে তাদের কন্টেন্টের প্রচারণা চালান। অবশ্যই প্রচারণার ক্ষেত্রে দর্শককে আঘাত করে এ ধরনের কোনো কিছু করা উচিত না।'