দ্রব্যমূল্যে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যতোটা না ভুগছে তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি স্বল্প আয়ের মানুষের। ফলে মধ্যবিত্ত থেকে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য দেশের বড় চেইন সুপারশপ ‘স্বপ্ন’ চিরচেনা নিয়মের বাইরে গিয়ে সম্প্রতি নিয়ে এসেছে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
চলতি মাস থেকে স্বপ্ন, গ্রাহকদের কেনার সুবিধার্থে গরুর মাংস ও আলু মিক্স কম্বো বিক্রি শুরু করে ১৬০ টাকায়। একটি পরিবারের এক বা দুবেলার মাংস-ভাতের আয়োজনে ক্রেতাদের জন্যে সুবিধাজনক এই প্যাক এনেছে ‘স্বপ্ন’। যা সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়াও গরুর মাংস ও আলু মিক্স কম্বো ছাড়াও এমন আরও ২০টির বেশি সাশ্রয়ী অফারে মিক্স কম্বো প্যাক বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে স্বপ্নে ২০-২৫টি কম্বো প্যাক বিক্রি হচ্ছে— যেখানে অল্প পরিমাণে মাছ-সবজি, মুড়িঘন্ট কম্বো, ইলিশ-কচুর মুখী কম্বো, মাংস- খিচুড়ি, কাটা ইলিশ, মিক্স সবজি থেকে শুরু করে রয়েছে বিকেলের নাস্তার প্যাক ।
উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির এই সময়ে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের সুবিধার্থে ২০০ গ্রাম গরুর মাংস ও ১০০ গ্রাম আলুর কম্বো প্যাক বিক্রি শুরু করেছে স্বপ্ন সুপার শপ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, মাত্র ৯ দিনে ১৬০ টাকা মূল্যের এই কম্বো প্যাক বিক্রি হয়েছে ৭৫,০০০টি— যা টাকার অঙ্কে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
রবিবার (১০ নভেম্বর) তেজগাঁওয়ে নিজ অফিসে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিজেদের সাম্প্রতিক ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে চিন্তাভাবনা শেয়ার করেন স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাব্বির হাসান নাসির। এ সময় তিনি নানান বিষয় তুলে ধরেন।
স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির জানান, বর্তমানে স্বপ্নে ২০-২৫টি কম্বো প্যাক বিক্রি হচ্ছে— যেখানে অল্প পরিমাণে মাছ, মাংস, খিচুড়ি, মিক্স সবজি থেকে শুরু করে রয়েছে বিকেলের নাস্তার প্যাক। নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্যপণ্য সহজে কিনতে পারেন, সেই জন্যই স্বপ্ন এই আইডিয়া (ধারণা) নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, "আমাদের যে কম্বো প্যাকগুলো চলছে, এর মধ্যে সর্বাধিক বিক্রিত হলো গরুর মাংস ও আলু— যেটা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। এখানে ১০ পিস গরুর মাংস ও ৩ পিস আলু রয়েছে।"
"এছাড়া বেশি বিক্রিত আইটেমগুলোর মধ্যে রয়েছে— ১৩৫ টাকার ৪পিস রুই মাছ, বেগুন ও আলুর কম্বো; ১০০ টাকায় মুড়িঘণ্ট; ৬০ টাকায় ২ পিস মাছ ও আলুর কম্বো; ৬৫ টাকায় খিচুড়ির জন্য চাল-ডাল ও ২টি ডিমের কম্বো এবং ৫০ টাকার সবজি মিক্স," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই সুবিধা চালু করার পর ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। গত ১২ বছরেও এমন ভালোবাসা আমরা পাইনি। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, এমনও লোক কিনছেন, যারা গত ৩ বছরেও মাংস কিনে খেতে পারেননি। কারণ সাধারণ দোকান থেকে এক কেজির কম মাংস বিক্রি করতে চায় না। বিক্রি করলেও অনেকে লজ্জায় কিনতে পারেন না। কিন্তু আমাদের শপগুলোতে ওইসব লোক কিন্তু এসে মাংসের প্যাকেজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
সাব্বির নাসির বলেন, "করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও টাকার অবমূল্যায়নে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, সেটাকে সামাল দিতে অনেক পরিবারই বিভিন্ন সেগমেন্টে কমজাম্পশন (ভোগ) কমিয়েছে। অনেকে গরুর মাংস কিনতে পারেন না, বড় একটি মাছ কেনার সামর্থ হারিয়েছেন। তাদের কথা চিন্তা করেই স্বপ্ন এই কম্বো প্যাকগুলো বাজারে এনেছে। স্বপ্ন চায়, দরিদ্র পরিবারগুলোও যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত না হয়।"
উচ্চবিত্ত মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খাবার নষ্ট না করে আপনারা যতটুকু খাবেন ততটুকুই ক্রয় করুন, রান্না করুন। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ কমবে। সাধারণ মানুষ ভালো থাকার সুযোগ পাবেন।
তিনি আরও বলেন, "সরকার পতনের পর স্বপ্নের সেলস গ্রোথ ছিল নেগেটিভে। কিন্তু এখন স্বপ্নের গ্রোথ চলে এসেছে ১৫ শতাংশে। কোনো কোনো সেগমেন্টে এই গ্রোথ ৫০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।"
এ সময় বাজার ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের কিছু উদ্যোগ ভালো প্রভাব ফেলছে বলে জানান স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তিনি বলেন, "সরকার সয়াবিন তেল, পেঁয়াজে যে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করেছে— এটা ভালো উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগের পাশাপাশি দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরবরাহ বৃদ্ধির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করতে হবে।"
স্বপ্ন জানায়— ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার জোনের ১০০টি আউটলেটে এ অফার চলছে মাসের শুরু থেকে। ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এ ধরনের মোট ১০০টি কম্বো প্যাক স্বপ্নের ৫২০টি আউটলেটের সবগুলোতে বিক্রি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।