এইমাত্র
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেন মঈন-ফখরুদ্দিনের মতো না হয়
  • আমাদের ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভাববেন না: জামায়াত আমির
  • তিস্তা ইস্যুতে প্রয়োজনে সমাধানের পথ নিজেরাই খুঁজবো: তারেক রহমান
  • চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি অবাঞ্চিত ঘোষণা
  • ইডেনে সার্টিফিকেট নিতে এসে আটক হলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেত্রী
  • বান্দরবানে বাস চাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, প্রতিবাদে বাসে আগুন
  • প্রাথমিকের ৬৫৩১ জনের ফল বাতিলের আপিল শুনানি ২ মার্চ
  • নোয়াখালীতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত
  • খুলনায় আগুনে পুড়ল ৬ দোকান
  • প্রয়োজনে র‍্যাব নতুন করে গঠন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • আজ বুধবার, ৬ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
    ফিচার

    আমার ঘর চাই না, দু'মু‌ঠো খাবার চাই

    মো. রিয়াজ হোসাইন, বাকৃ‌বি প্রতি‌নি‌ধি প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম
    মো. রিয়াজ হোসাইন, বাকৃ‌বি প্রতি‌নি‌ধি প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম

    আমার ঘর চাই না, দু'মু‌ঠো খাবার চাই

    মো. রিয়াজ হোসাইন, বাকৃ‌বি প্রতি‌নি‌ধি প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম

    ডিসেম্বরের শীতের রাত। চারদিকে নিস্তব্ধতা। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন পরিবেশ, কনকনে শীতে বাইরে বের হওয়াও যেন অসহনীয়। তবুও সেই কুয়াশা ভেদ করে সন্ধান পাওয়া গেল কয়েকজন মানুষের। তাদের মুখমন্ডল ঢাকা, গায়ে মোটা কাপড়। সারারাত জু‌ড়ে যে ক্যাম্পাসে শিকারি পেঁচার থাক‌তো কলরব , আজ সেখা‌নে নীরবতা। প্রকৃ‌তির বৈরিতায় শী‌তে জবুথবু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন পাকা দালানের বন্ধ ঘরে কম্বল গায়ে দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে, তখনই চোখে পড়ল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের গেটের বা‌হি‌রে মেঝেতে শুয়ে থাকা এক বৃদ্ধাকে। মাথার নিচে একটি প্লাস্টিকের বোতল, মেঝেতে পাতলা চটের পাটি, শরীরে জড়ানো পুরাতন নোংরা এক জ্যাকেট। মাথার চুল এলোমেলো, গায়ের রং কালো। জ্যাকেটটি হয়তো কোনো ভাগ্যবান ব্যক্তির পুরনো অব্যবহৃত জিনিস।

    বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তার নাম হানিফা। তার পরনে শুধু একটি লুঙ্গি আর পুরনো জামা। শরীরে তেমন কোনো শক্তি নেই, কাজ করার সামর্থ্যও নেই। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের হোটেলের অবশিষ্ট খাবার খেয়েই তার দিন পার হয়। তবে শুক্রবারে ভিড় বেশি থাকায় কোনো দিন একেবারে না খেয়ে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে কেউ হয়তো একটু চানাচুর বা বিস্কুট দিয়ে যায়।

    তি‌নি আরও জানান, মসজিদের ভেতরে জায়গা না পাওয়ায় মসজিদের গেটের বা‌হি‌রে মেঝেতে ঘুমান। আমার শরীরে ময়লা কাপড়, জায়গা দেবে কে? অনেকেই বলে এখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু আমি যাব কোথায়? এই পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। সবাই আমাকে পাগল ব‌লে ডাকে। কাছে গেলেই দুর্গন্ধের অজুহাতে দূরে সরে যায়, কেউ আবার লাঠি দিয়ে আঘাত ক‌রে। নিজের জন্মস্থানে ফিরে গেলে লোকজন গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরের কানিহারি গ্রামে হানিফার বাড়ি। কিন্তু সেখানে পরিবারের কেউ নেই, ভিটেমাটিও নেই। প্রতিবেশীদের কাছে তিনি একেবারেই মূল্যহীন। সন্তান জন্মদানের সময় তার স্ত্রী মারা যায়। এরপর থেকেই নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা হলে তারা না দেখার ভান করে চলে যায়।

    হানিফা আরও বলেন, "এই শীতে ভালো একটা কম্বল, জ্যাকেট আর একটি পাটি থাকলে হয়তো শীতটা কাটিয়ে উঠতে পারতাম। আমার ঘর চাই না দু'মু‌ঠো খাবার চাই।

    বিশ্ব‌বিদ্যালয়ের ক‌য়েকজন দোকা‌নির সা‌থে কথা ব‌লে জানা যায়, হা‌নিফা শান্ত ও ভা‌লো ম‌নের মানুষ। অ‌নেক‌দিন ধ‌রে মস‌জি‌দের গেই‌টের বা‌হি‌রে ঘুমাতে দেখ‌ছি। আবার দিনহ‌লে অন্যত্র চ‌লে যায়। দোকা‌নে দোকা‌নে ঘু‌রে যা পায় তাই খে‌য়ে ক্ষুধা নিবারণ ক‌রে।

    নাম প্রকা‌শে অ‌নিচ্ছুক শিক্ষার্থী‌রা জানান, এই শী‌তে বা‌হি‌রে ঘুমা‌নো কা‌রো প‌ক্ষেই সম্ভব না। মান‌বিকতা থে‌কেই সাধ্যমত অর্থ দি‌য়ে সাহায্য ক‌রে‌ছি। একটা পুর‌নো শী‌তের কাপড়ের ব্যবস্থা ক‌রে দি‌য়ে‌ছি। সবাই য‌দি নি‌জ অবস্থান থে‌কে সামান্য ক‌রেও সাহায্য ক‌রে বৃদ্ধার অ‌নেক উপকা‌রে আস‌বে।

    দেশ স্বাধীন হলেও হানিফার জন্য এই দেশে ঘর হয়নি। তার নিঃসঙ্গ জীব‌নে শীত এবং দু'মু‌ঠো খাবা‌রের কষ্ট যেন ছাত্র জনতার আ‌ন্দোলনের চেতনার বিপরীত ছবি হয়ে ধরা দেয়।

    পিএম

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…