সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, কথিত ফ্যাসিস্ট আমাদের পাশের দেশে গিয়ে লুকিয়ে আছে। মন্দিরে হামলার পরিকল্পনা তারাই করেছে কিন্তু সফল হয়নি। এই চক্রান্ত এখনো তারা চালাচ্ছে। আমি অনুরোধ করবো আপনারা সবাই সজাগ থাকবেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর হামলার কাল্পনিক প্রোপাগান্ডা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে মাসব্যাপী লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুকী বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাউলশিল্পীদের নিয়ে নানা রকম প্রোপাগান্ডা চলছে। এগুলোর ব্যপারে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, যেকোনো বড় রাজনৈতিক ঘটনা একটি সাংস্কৃতিক ঘটনার বহিঃপ্রকাশ। জুলাই এর ঘটনা একদিন দুইদিনের ঘটনা নয় মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ দিয়ে এই জাতিকে দুই ভাগ করা হয়েছে। আমাদের ধর্ম আমাদের সংস্কৃতির অংশ না, এটা বলে ধর্মকে সংস্কৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি সাংস্কৃতিক বিরোধ মেটাতে না পারি তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধ মিটবে না।
উপদেষ্টা বলেন, অনেক টাকা ব্যয় করে নগরীতে সংস্কার করলে যদি দর্শনার্থী না আসে তাহলে সংস্কারের কোন মূল্য থাকবে না। ৫০-৬০ বছর পরে আবারো এগুলো ধ্বংসের মুখে পড়বে। সোনারগাঁকে পর্যটন নগরী করা সম্ভব ঢাকা থেকে দর্শনারথীরা পরিবার নিয়ে দর্শনীয় স্থান দেখার পাশাপাশি রাত্রি যাপন করতে পারে এবং বিভিন্ন কালচারাল অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ করতে পারে। সোনারগাঁ বাংলাদেশের মধ্যে বড় ট্যুরিজমের জায়গা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সামনে এগিয়ে যাওয়া যে কোনো জাতির লক্ষ্য। কিন্তু সামনে এগিয়ে যেতে গেলে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পেছনে কোন রাস্তাটা ফেলে এসেছে বা কোন রাস্তা দিয়ে হেঁটে এসেছে এ জাতি, সেদিকে নজর রাখা। এ দিকে নজর রাখার কাজই হচ্ছে লোক ও কারুশিল্প মেলার কাজ। আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং আমাদের জার্নিটা কেমন ছিল সেই দিকে খেয়াল রাখা।
প্রতিবছরের মতো এবারও বড় আকারে আয়োজন হয়েছে জানিয়ে ফারুকী বলেন, এখানে আসার বড় বাধা হচ্ছে, এখানের অ্যাপ্রোচ রোডটা খুব সরু। এটা আজকেই সমাধান করতে না পারলেও এই বিষয়টি আমরা অ্যাড্রেস করবো। যাতায়াত ব্যবস্থা যাতে আরও উন্নত হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব হেলালউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার।
উৎসবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্পী মিলঞ্চি সিং, চিত্রিত হাতি ঘোড়া কারুশিল্পী ধীরেন্দ্র সূত্র ধর, টেপা পুতুল কারুশিল্পী সুনীল পালকে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরষ্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়। প্রত্যেককে একভরি ওজনের পদক ও এক লাখ টাকা প্রদান করা হয়। দুজনকে শিল্পাচারয জয়নুল আবেদীন আজীবন সম্মাননা ২০২৪ দেয়া হয়। নকশি কাঁথা শিল্পের জন্য বেগম হোসনে আরা ও তামাকাসা শিল্পের জন্য মানিক সরকার এ পুরস্কার পেয়েছেন। দুজনের প্রত্যেকে তিন লাখ টাকা ও দেড় ভরি ওজনের পদক দেওয়া হয়।
আবহমান বাংলার বিলুপ্ত প্রায় লোক ঐতিহ্য ও লোক সংস্কৃতির সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের লক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের এ উৎসবের আয়োজন করেছে। এবারের উৎসবে কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টিসহ মোট ১০০টি স্টল স্থান পেয়েছে। সারাদেশের প্রথিতযশা ৬৪ জন কারুশিল্পী কর্মরত প্রদর্শনীতে এবার অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়া উৎসবে রয়েছে লোকজীবন প্রদর্শনী, ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ, গ্রামীণ খেলা, বায়োস্কোপ প্রদর্শনী, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের তৈরি লোকজ পণ্য এবং উদ্যোক্তাদের কারুপণ্য প্রদর্শন ও বিপননের ব্যবস্থা।
প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে পরিবেশিত হবে বাউলগান, পালাগান, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি গান, জারি-সারিগান, হাছন রাজারগান, শাহ আব্দুল করিমের গান, লালন সংগীত, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ নৃত্যনাট্য, গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, চর্যাগান ও লোকগল্প বলা।
প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বিকাল ৩টা থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে লোকজীবন প্রদর্শন ও কানামাছি ও বউচিসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা প্রদর্শন করা হবে।
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে থানা ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উৎসব খোলা থাকবে। উৎসবে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা।