প্রগতিশীলতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও নিরপেক্ষতাকে মূলমন্ত্র করে গড়ে ওঠা সাংবাদিক সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব আজ গৌরবময় এক যুগে পা রাখল। ২০১৪ সালের ৩ অক্টোবর একদল তরুণ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার অঙ্গীকার থেকে প্রেসক্লাবের যাত্রা শুরু হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি কেবল বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রেসক্লাব শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, টিউশন ফি বৃদ্ধি, প্রশাসনিক অনিয়ম, হল আন্দোলন থেকে শুরু করে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে সামনে এসেছে।
সাংবাদিকতা করতে গিয়ে হামলা, মামলা ও হুমকি-ধামকির শিকার হলেও প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা পিছু হটেনি। বরং আরও দৃঢ়ভাবে কলম চালিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও সাংবাদিকরা সম্মুখ সারিতে উপস্থিত থেকে ঝুঁকি উপেক্ষা করে সত্য সংবাদ তুলে গণমানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। এভাবে তারা প্রমাণ করেছেন, সাংবাদিকতা কেবল সংবাদ পরিবেশন নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
প্রেসক্লাব শুধু সমস্যা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক দিক, শিক্ষার্থীদের সাফল্য, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে তুলে ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ক্যাম্পাসকেন্দ্রিকতার সীমা ছাড়িয়ে জাতীয় সংকটেও তারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইউছুব ওসমান বলেন, 'জবি প্রেসক্লাবের এক যুগে পা রাখার দিনে আমি সংগঠনের পক্ষ থেকে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানাই। আমরা সবসময় সত্যের পথে অটল থেকেছি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে, সমস্যা তুলে ধরতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক দিকগুলো প্রচারে আমরা সবসময় অগ্রণী। নানা বাধা সত্ত্বেও আমাদের কলম থেমে থাকেনি। সাংবাদিকতা কেবল খবর দেওয়ার নয়, সমাজ গঠনের হাতিয়ার; আমরা এ কথাই প্রমাণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এ যাত্রা কেবল শুরু। অচিরেই বড় আয়োজনের মাধ্যমে এই গৌরবান্বিত যাত্রা উদযাপন করবো।'
সভাপতি মো. মেহেদী হাসান বলেন, 'এই এক যুগে জবি প্রেসক্লাব বস্তুনিষ্ঠতা, প্রগতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িকতার মূলনীতিতে অবিচল থেকেছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে যেমন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেছি। আমাদের সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের ও সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সাংবাদিকতা কেবল ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের লড়াইয়েও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই বিশেষ দিনে আমরা সকল সদস্য, শুভানুধ্যায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামীতেও সত্য, ন্যায় ও মানুষের পক্ষে আমরা আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাব।'
এক যুগের এই পথচলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব কেবল একটি সংগঠন নয়, বরং শিক্ষার্থী সমাজের নির্ভীক কণ্ঠস্বর এবং সমাজ পরিবর্তনের নিরলস যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ফাহিম হাসনাত/আরআই