২০২৪-২৫ অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বাড়লেও কমেছে গম, ডাল, পেঁয়াজ ও মরিচসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের আমদানি। এতে গেল অর্থবছর খাদ্য-দ্রব্য জাতীয় ভোগ্য পণ্যের বাণিজ্য ঘাটতি ৭৩ হাজার ২০০ মেট্রিকটন।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল, রফতানি মূল্য বৃদ্ধি ও নানান শর্তের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এদিকে ভারতের সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় ৮টি ভোগ্য পণ্য আমদানিতে কোটাচুক্তি ৩ বছরেও বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। এতে খাদ্য আমদানিতে ঘাটতি দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার প্রভাবে বছরজুড়ে নিত্য পণ্যের বাজার থাকছে চড়া। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ ভোগ্যপণ্যের চাহিদা রয়েছে, সব পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা না থাকায় আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। আর এসব পণ্যের বড় অংশ আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। তবে নানান কারণে দেশটি হঠাৎ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, রফতানি মূল্য ও কঠিন শর্ত দেওয়ায় দিন দিন বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলেছে। সরবরাহ ঘাটতির কারণ দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করে সুযোগ নিচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীরা। যার খেসারত গুণতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ২০২২ সালের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কোটাচুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বার্ষিক ভারতের কাছে গম ৪৫ লাখ টন, চাল ২০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৭ লাখ টন, চিনি ১৫ লাখ টন, আদা ১ লাখ ৫০ হাজার টন, ডাল ৩০ হাজার টন ও ১০ হাজার টন রসুনের অনুরোধ করা হয়। শর্ত অনুযায়ী কোটাপাওয়া গেলে যখন-তখন ভারত এসব পণ্যের রপ্তানি বন্ধ বা মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবে না। এতে দ্রব্যমূল্যের দাম অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে ও খাদ্য সংকট কমে আসবে। তবে আজ পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় খাদ্য দ্রব্য আমদানিতে প্রতিবছর ঘাটতি বাড়ছে।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, সরকার পরিবর্তন স্বাভাবিক। তবুও আমরা আশা করি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে ভারত সরকার তাদের বাণিজ্যনীতির জায়গায় যেন অটুট থাকে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, সরকার পরিবর্তন আর আমদানি জটিলতায় বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ভারতের সাথে বাংলাদেশ সরকারের কোটাচুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে।
বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে চাল আমদানি হয় ২১ হাজার ৩৮৪ টন, ডাল ৭৮ হাজার ৯৪৭ টন, পেঁয়াজ ২০০ টন, আদা ৪৩১ টন, মরিচ ৭ হাজার ১৫২ টন, আলু ৪ হাজার ৯৬৩ টন, চিনি ও গম আমদানি হয়নি। অপরদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টন, ডাল ১ হাজার ১ হাজার টন, পেঁয়াজ ১৫ হাজার ২৯৫ টন, আদা ৬০ টন, মরিচ ৯ হাজার ৪৪৭ টন, আলু ৩ হাজার ৮৪ টন এবং চিনি ও গম আমদানি হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৫৯ মেট্রিকটন আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৮৬০ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোগ্য পণ্যের আমদানি কমেছে ৭৩ হাজার ১৯৯ মেট্রিকটন।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩২ লাখ মেট্রিকটনের বিপরীতে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ মেট্রিকটন। চাহিদা মেটাতে বাকিটা আমদানি করতে হয়। চালের চাহিদা ৩ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিকটনের মতো। সেখানে উৎপাদন হয় ৪ কোটি ১৫ লাখ টন। চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন মাত্র ১ লাখ টন। গমের চাহিদা ৭০ লাখ টন আর উৎপাদন ১২ লাখ টন। আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন আর গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১২৯ লাখ টন। আদার চাহিদা ৩ লাখ টন আর উৎপাদন ২ লাখ টনের মতো। রসুনের চাহিদা ৬ লাখ টন আর গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৯ হাজার ৯০০ টন।
বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ পরিচালক মো. আবুতালহাজ জানান, ২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি কমেছে বন্দরে। আমদানিকৃত পণ্যের মান পরীক্ষা শেষে বন্দরে খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়।
এসকে/আরআই