শুধু বরিশাল নগরীর এখন অলিগলি সহ আশপাশে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। বিভিন্ন স্পটে অর্ধশতাধিক নারী মাদক বিক্রেতা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রির বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সহজলভ্য হওয়ায় এর ভয়াল ছোবলে ধ্বংসের পথে বেশি ভাগই হলো তরুণ-তরুণীরা। তবে অন্য বয়সের লোকরাও মাদকের ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে অনেকে জড়াচ্ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে।
বরিশালের সচেতন নগরবাসী জানান, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাচ্ছে। কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে ফের মাদকের সিন্ডিকেট তৈরি করে যাচ্ছে। তাই মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৯ টার সময় নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ডের শাহপড়ান সড়কের বাসিন্দা ও সাবেক রিক্সাচালক সালাম এর স্ত্রী চায়ের দোকানী রেবা আক্তারের বাসা থেকে স্থাণীয় এক যুবক রেবার কাছ থেকে দুই পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা যুবককে মাদকসহ হাতে নাতে ধরে গণধোলাই দিয়ে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
স্থানীয় কবির বলেন, আটকৃত যুবক পেশায় একজন দিনমজুর। কাজ শেষে ৭ টাকা বেতন পায়। আর সেই ৭শ’ টাকার ৬শ’ টাকাই নেশার পিছনে খরচ করেন। আর বাসায় স্ত্রী-সন্তান না খেয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন। শুধু তাই নয়, রেবার কাছ থেকে প্রায়ই মাদক কিনতো আটকৃত যুবক। আটকৃত যুবক স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এবং পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, তাদের এলাকার চিহ্নিত নারী মাদক ব্যবসায়ী রেবার কাছ থেকে দুই পিচ ইয়াবা ৬শ’ টাকায় কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে ফেলে।
অন্যদিকে স্থানীয়রা মাদকসহ ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেনি। তারা ঐদিন রাতেই সবাই ঐক্য হয়ে এলাকায় একটি মাদকবিরোধী মিছিল করেন। সেখানে তারা শ্লোগান দেন, 'হয় নারী মাদক ব্যবসায়ী রেবাকে পুলিশ আটক করবে, না হলে আমরা সবাই এক হয়ে তাকে এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে দিবো।'
স্থানীয় ২৯ নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কবির হাওলাদার বলেন, প্রায় দেড় মাস পূর্বে এলাকার আলোচিত নারী মাদক ব্যবসায়ী মাদক বিরোধী সমাবেশে স্থানীয় গুণমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এয়ারপোর্ট থানার পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে সে আর কখনও মাদক ব্যবসা করবে না বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেটা ছিলো রেবার নাটকীয়। তার পরের দিন থেকে পূর্ণরায় মাদক বিক্রি করে আসছে। তার মাদক বেচা-কেনার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে তিনি তার কোন তোয়াক্কা না করেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
তিনি আরো বলেন, এলাকাবাসী তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিন দিন আগে মাদক বেচার সময় তাকে হাতে নাতে ধরে। এসময় মাদক কিনতে আসা এক যুবক ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে এলাকাবাসী হাতে নাতে ধরেন। পরে তার কাছে জিজ্ঞেস করলে যুবক বলেন, 'আমি কি দোষ, আমি কিনতে আসছি। তবে মাদক বিক্রেতা রেবা তাকে না ধরে আমাকে কেন ধরলেন? তিনি বিক্রি না করলে আমি কি এখানে কিনতে আসতাম?'
ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সুরুজ শিকদার কালু বলেন, এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বহু পরিচিত রেবা। তবে রেবার মাদক সিন্ডিকেট দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তার কারণে এলাকার যুব সমাজ থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ মাদকের ছোবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। আমরা এলাকাবাসী তার মাদকের হাত থেকে বাঁচতে চাই।
স্থানীয় শ্রমিক দলের নেতা সোহেল শিকদার বলেন, মাঝে মাঝে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে দেখা যায়। তবুও কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না নারী মাদক ব্যবসায়ী রেবার মাদকের বিস্তার। বরিশাল শহরের বিভিন্ন জায়গায় হাত বাড়ালেই মিলে থাকে মাদক।
কিন্তু বর্তমানে শাহপরান সড়কেও তার চেয়ে কম নয়। এখানে প্রকাশ্যে ঘরের মধ্যে বসে দিনের পর দিন মাদক বিক্রি করে যাচ্ছে নারী মাদক ব্যবসায়ী রেবা ও তার ছোট বোন। আমরা বেশ কয়েকবার থানা পুলিশকে তার মাদক বেচা-কেনার কথা বলা হলেও থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে। তবে আমি মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয়কে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
বরিশাল সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, দিন দিন মাদকের ভয়াবহতা বাড়ছে। এর প্রভাবে আমাদের মেধাবী তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। মাদক থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। এজন্য সব শ্রেণিপেশার মানুষের সচেতনতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান দরকার। অন্যথায় এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাব না।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন ৪ থানা এলাকায় দিন দিন মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। তাই প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি, মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ আল-মামুন-উল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি প্রথমে দুই পিচ ইয়াবাসহ এক যুবককে স্থানীয় জনতা হাতে নাতে ধরেছে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দীর্ঘ দিন ধরে শাহপরান সড়কে দুই নারী রেবা ও তার ছোট বোন মাদক ব্যবসা করে আসছে, বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর মাধ্যমে বিষয়টি আমরা জানতে পারি, দুই নারী সেখানে নাকি মাদক ব্যবসা করে আসছে।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তারা যদি সত্যি মাদক ব্যবসায়ী হয়ে থাকে, তাহলে তাদের গ্রেফতার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআর