রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রলি সংকট এখন চরম পর্যায়ে। প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করলেও সেবায় রয়েছে মাত্র তিন হাজার ছয়শ ট্রলি। ফলে একসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করলেই দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে এমন এক বিশৃঙ্খলার চিত্র দেখা যায় বিমানবন্দরে। ভোরে প্রবল ঝড়-বৃষ্টির কারণে আকাশে চক্কর দিচ্ছিল পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। বৃষ্টি কমলে একে একে অবতরণ শুরু হয় উড়োজাহাজগুলোর। কিন্তু ইমিগ্রেশন শেষে লাগেজ নিতে গিয়ে যাত্রীরা ট্রলি না পেয়ে বিপাকে পড়েন। কয়েক ডজন ট্রলি সরবরাহ করা হলে তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে শত শত যাত্রী। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয় বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে।
বিমানবন্দরের ৫ নম্বর লাগেজ বেল্টের সামনে শত শত যাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রলির আশায়। রাত ৯ টা ২০ মিনিটে ২০–২৫টি ট্রলি সরবরাহ করা হলে শুরু হয় টানাটানি, ধাক্কাধাক্কি ও চিৎকার-চেঁচামেচি। এতে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
প্রবাসী রুবেল বলেন, 'সারারাত জার্নি করে এসে দেশে নেমেই ট্রলির জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো। মানুষ মারামারি করছে, এভাবে একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চলতে পারে না।'
আরেক যাত্রী নোয়াখালীর ইউসুফের ক্ষোভ, 'ট্রলির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বয়স্করা কষ্টে পড়ে যায়।'
শুধু ট্রলি সংকটই নয়, ট্রলিতে লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে বের হতেও পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। টার্মিনাল ১ ও ২-এর ক্যানোপি অংশে ট্রলি বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেড় ফুট উঁচু স্টিলের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে ট্রলি আটকাতে। ফলে যাত্রীদের বাধ্য হয়ে কাঁধে বা মাথায় লাগেজ তুলতে হচ্ছে।
সৌদি প্রবাসী আবুল বাসার বলেন, 'সারারাত ভ্রমণ শেষে যখন শরীর ক্লান্ত, তখন ট্রলি নিয়ে বের হতে না পারা ভয়াবহ কষ্টের। এটি যাত্রীদের প্রতি চরম অবহেলা।'
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত ট্রলি রয়েছে। তবে একসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করলে সংকট দেখা দেয়। এ চাপ কমাতে ক্যানোপির বাইরে ট্রলি নেওয়ার পথ বন্ধ রাখা হয়েছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস. এম. রাগীব সামাদ বলেন, 'দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কখনও একসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করলে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যায়। এতে ট্রলির চাহিদাও কয়েকগুণ বাড়ে। বর্তমানে প্রায় ৩,৬০০ ট্রলি ব্যবহৃত হচ্ছে, আরও ৫০০ নতুন ট্রলি সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।'
দীর্ঘদিন ধরেই শাহজালাল বিমানবন্দরে ট্রলি সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি চলছে। সরকারের একাধিক উদ্যোগের পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। যাত্রীদের প্রত্যাশা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এই অনিয়মের অবসান ঘটাবে কর্তৃপক্ষ, যেন দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানের সেবার প্রতীক হয়ে ওঠে।