পাকিস্তানে বিরোধী দলগুলোর তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ থাকার পরও এরইমধ্যে শনিবার (৮ নভেম্বর) সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী বিল উত্থাপন করা হয়েছে সিনেটে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিনেটে উত্থাপন করা হয় এটি। ২৬ পৃষ্ঠার বিল উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার। আর এ বিলটি পাস হলে ‘সংবিধান (২৭তম সংশোধনী) আইন, ২০২৫’ নামে পরিচিত হবে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সরকারের এই বিলের মাধ্যমে কয়েকটি বড় পরিবর্তনের প্রস্তাব তোলা হয়েছে সংবিধানে। এর মধ্যে রয়েছে- ‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’ নামে নতুন একটি আদালত গঠনের বিষয়, যা শুধু সংবিধানসংক্রান্ত মামলা নিয়ে কাজ করবে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট ও উচ্চ আদালতগুলোর যেসব মামলায় সংবিধান ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়, সেসব ভবিষ্যতে গঠিত এই নতুন আদালতে স্থানান্তরিত হবে।
বিল মোতাবেক, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি সামরিক নেতৃত্ব কাঠামো বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, বর্তমান চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি’র (সিজেসিএসসি) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিলুপ্ত করা হবে পদটি। তারপর নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হবে। এতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সেনাপ্রধানই। আর সেনাপ্রধানের সুপারিশ অনুযায়ী ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধানকে নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে থাকবে। কিছু নতুন ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। এতে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি দেয়া হয়েছে।
নতুন এ বিলটিতে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, ২৪৮ অনুচ্ছেদে সংশোধন এনে প্রেসিডেন্টকে আজীবন ফৌজদারি মামলা বা গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে অব্যাহতি (ইমিউনিটি) প্রদান করা হবে। তবে গর্ভনরদের ক্ষেত্রে শুধু তাদের দায়িত্ব পালনকালে এই সুরক্ষা থাকবে। আর বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ও গর্ভনর দু’জনই এ সুরক্ষা শুধু মেয়াদকালে পাবেন।
নতুন এ বিলে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার আকারও বাড়ানো হবে। সংবিধানের বর্তমান বিধান মোতাবেক সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার ১১ শতাংশ পর্যন্ত মন্ত্রী রাখার নিয়ম রয়েছে। তবে নতুন প্রস্তাবে এটি বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১৩ শতাংশ।
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী বিল সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এ বিলটি পাস হলে এতে দেশটির বিচার বিভাগ, নির্বাহী শাখা ও সামরিক কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে বিশাল পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে নতুন সাংবিধানিক আদালত গঠন এবং রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তির প্রস্তাব ক্ষমতার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
এদিকে নতুন বিলটি সিনেটের স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখানে কমিটির পর্যালোচনা শেষে বিলটি ভোটের জন্য ফের সিনেটে তোলা হবে। তবে ইতোমধ্যেই দেশটির বিরোধী দলগুলো জানিয়েছে, তারা সংসদে ও এর বাইরে এই সংশোধনীর বিরোধিতা করবে।
এবি