ঢাকায় জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে দেখা গেছে অন্যরকম এক দৃশ্য। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে খেলোয়াড়রা যেন বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা ক্ষোভ উড়িয়ে দিয়েছে। মোরসালিনের করা একমাত্র গোলে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ের জন্য লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ২২ বছর।
বাংলাদেশের এমন জয়ে খেলোয়াড় থেকে ভক্ত-সমর্থক সবাই উচ্ছ্বসিত। আর বিপরীত দিকে তাকালে দেখা মিলল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। ভারতীয় ডাগআউটে নীরবতা, হতাশায় ডুবে মাঠ ছাড়লেন খেলোয়াড়েরা।
দক্ষিণ এশিয়ান ডার্বির পর ভারতের গণমাধ্যমগুলো অবশ্য কোনো রাখঢাক রাখেনি। অনেকেই শিরোনামে লিখেছে—লজ্জাজনক হার।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া:
১.ইন্ডিয়া টুডে: ভারতীয় ফুটবলের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার, বাংলাদেশের কাছে ‘বিব্রতকর’ হার।
২.দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১-০ গোলে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে ভারত।
৩.এনডিটিভি: বাংলাদেশের কাছে ০-১ গোলের হারে ভারতের ‘লজ্জাজনক’ পরাজয়।
৪.টাইমস নাউ: ৮,৩৪০ দিনের মধ্যে সবচেয়ে নিচে ভারতীয় ফুটবল, ২১শ শতাব্দীর বড় ‘অপমান’।
৫.ফার্স্ট পোস্ট: ঘরের মাঠে ভারতকে লজ্জা দিয়ে ১-০ গোলে হারাল বাংলাদেশ।
৬.আনন্দবাজার: ২২ বছর পর ফুটবলে বাংলাদেশের কাছে হার ভারতের, স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতায় মানরক্ষার ম্যাচেও ব্যর্থ ঝিঙ্গানরা।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের থেকে যোজন যোজন দূর পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে গতকালের ম্যাচের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের থেকে কয়েকগুণ পিছিয়ে ছিল সফরকারীরা। ভারতের বিশৃঙ্খল রক্ষণ, খেইহারা মাঝমাঠ আর গোলমুখে ব্যর্থতা ম্যাচ–বিশ্লেষণগুলোতে সামনে উঠে এসেছে।
২০০৩ সালে ঢাকা স্টেডিয়ামেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে বাংলাদেশ ভারতকে পরাজিত করেছিল। ২২ বছর পর এবার একই মাঠে বাংলাদেশ জিতল শেখ মোরসালিনের গোলে। বাংলাদেশ ম্যাচের ১২ মিনিটে লিড নেয়। শেষ পর্যন্ত তার গোলেই অবিস্মরণীয় জয়ের মুহূর্ত।
বাংলাদেশ দলের বদলে যাওয়ার গল্পটিও কম নাটকীয় নয়। ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা হামজা দেওয়ান চৌধুরী দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই উৎসাহ বেড়েছে তরুণদের মধ্যে। তার পথ ধরে জাতীয় দলে এসেছেন সামিত সোম, ফাহামিদুল, জায়ান আহমেদ, কিউবা মিচেল। যা দলের চেহারায় এনেছে ভিন্ন মাত্রা।
অন্যদিকে, ভারতের ফুটবলে চলছে কঠিন সময়। সুনীল ছেত্রী অবসর ভেঙে ফিরেও খুঁজে পাচ্ছেন না ছন্দ; বাংলাদেশের বিপক্ষে তো স্কোয়াডেই ছিলেন না। কোচ পরিবর্তনেও কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল দুই দলের। তবু ভারতের কাছে এই ম্যাচ ছিল কিছুটা মান রক্ষার লড়াই, আর বাংলাদেশের কাছে ছিল নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ।
ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় সমর্থকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কোচকে দোষ দিচ্ছেন, কেউ দলে পরিবর্তন চান, আবার কেউ বলছেন, ‘ভারতের ফুটবল নেমেছে নিচের দিকে।’
আরডি