আজ ১৯ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। প্রতি বছর এই দিনে বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনে পালন করা হয় দিনটি। মূলত, পুরুষরা পৃথিবী, পরিবার এবং সমাজে যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন―তা উদযাপন করার জন্য এই বিশেষ দিনটি।
পুরুষ জীবনের বিভিন্ন দিককে স্বীকৃতি দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে। এদিন পুরুষ ও ছেলে শিশুদের স্বাস্থ্য লিঙ্গসমতার বিষয়টি যেমন সামনে আসে; তেমনি ইতিবাচক পুরুষ রোল মডেল তুলে ধরা এবং পুরুষদের প্রতি হওয়া বিভিন্ন বৈষম্যের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলারও সুযোগ তৈরি হয়।
১৯৬০-এর দশক থেকেই পুরুষদের জন্য একটি বিশেষ দিবসের প্রচলন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ২৩ ফেব্রুয়ারিকে পুরুষ দিবস হিসেবে পালনের আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে’ হিসেবে পালিত হতো। যা মূলত পুরুষদের বীরত্ব ও ত্যাগের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য উদযাপিত হতো। এ জন্য দিনটি গৃহীত হয়নি।
পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ড. জেরোম টিলাকসিংহ প্রতিষ্ঠা করেন এই দিনটি। টিকালিং তার বাবার জন্মদিন এবং একই দিনে দেশের ফুটবল দলের একটি বিশেষ অর্জনের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে এই তারিখটি বেছে নেন।
বর্তমানে পুরুষ দিবস উদযাপনের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজন থাকে। গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা হয় দিবসটি নিয়ে। তবে সার্বিকভাবে পুরুষরাও যেন যত্ন ও নিরাপত্তায় থাকে, সেটি চাওয়া থাকে অনেকের।
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে কোথাও তেমন কোনো আওয়াজ নেই। কোনো প্রতিষ্ঠান পুরুষ দিবসে তেমন আগ্রহ দেখায় না।নেই অফার, ক্যাম্পেইন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট বা আলোচনার ঝড়। ক্যালেন্ডারে ১৯ নভেম্বর এলেই দৃশ্যটা উল্টো। যেন কেউ জানেনই না। পুরুষ দিবসে কয়েকটি পোস্ট দিয়েই দায়িত্ব সারার মতো ব্যাপার। যেখানে আলো নেই, সেদিকে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসও কম।
সমাজে পুরুষদের নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা আছে, তারা নাকি সব সময় শক্ত, দৃঢ় আর অনুভূতি-পরিচালনায় দক্ষ। ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের বলা হয়, ‘কাঁদা যাবে না’, ‘ভয় পেলে চলবে না’, ‘দুর্বলতা দেখানো মানা’। এই মানসিকতার ফলে পুরুষেরা অনেক সময় নিজের কষ্ট, মানসিক চাপ বা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কিছুই প্রকাশ করেন না। যেহেতু তাদের সমস্যা প্রকাশ পায় না, সমাজও ধরে নেয় পুরুষ দিবস পালনের তেমন প্রয়োজন নেই।
পুরুষদের সমস্যাগুলোকে অনেকেই বাস্তব সমস্যা হিসেবে মানতে চান না। অনেকের ধারণা, পুরুষেরা ‘প্রিভিলেজড’, তাই তাদের আলাদা দিবসের প্রয়োজন নেই। অথচ বাস্তবে কর্মজীবনের চাপ, আত্মহত্যার হার, আসক্তি, পরিবারে দায়িত্ব এমন কিছু ক্ষেত্রে পুরুষেরা বেশি সংকটে থাকে।
পুরুষেরা নিজেরাই দিবসটি উদযাপনে আগ্রহ দেখান না। অনেক সময় তারা মজা করে বলেন, আমাদের আবার দিবস লাগে নাকি! এ ধরনের মনোভাব দিবসটিকে আরও পিছিয়ে দেয়।
এইচএ