
সময়ের কণ্ঠস্বর: দক্ষিণ ভারতের কেরালা থেকে গত দু-একমাসে অন্তত ২১ জন নারী-পুরুষ নিখোঁজ হয়ে গেছেন। তারা ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিন্নারি বিজয়ন বিধানসভায় জানান, এই নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার ইতোমধ্যেই সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং এরা সিরিয়া বা আফগানিস্তানের জঙ্গি শিবিরে পৌঁছে গেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এদের অন্তর্ধান রহস্য খতিয়ে দেখতে সরকার একটি বিশেষ তদন্তকারী দলও গঠন করেছে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলোও স্বীকার করছে, এরা অনেকেই ইসলামের গোঁড়া সালাফি ভাবধারায় আকৃষ্ট ছিলেন। কেরালায় কাসারগোড জেলা থেকে ১৭জন ও পালাক্কাড থেকে ৪ জন গত চার-পাঁচ সপ্তাহের ভেতর রাতারাতি উধাও হয়ে গেছেন। তারা প্রায় সবাই বেশ ধনী ও সম্পন্ন পরিবারের।
নিখোঁজ পুরুষদের প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষিত, তাদের স্ত্রীরাও পড়াশুনা করা। এমন কী বছর তিনেক আগেও এরা সবাই বিলাসবহুল জীবনেই অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তাদের পরিবার বলছে আচমকাই তারা সব ছেড়েছুড়ে ‘প্রকৃত ইসলামী ধারায়’ জীবনযাপনের কথা বলতে শুরু করেন।
পাদান্না এলাকার পারামবান আবদুল রহমানের দুই ছেলে, তাদের দুই গর্ভবতী স্ত্রী, বড় ছেলের দুবছর বয়সী সন্তান সবাই উধাও হয়ে গেছেন। এমন কী তার স্ত্রীর বোনের ছেলে আশতাকও বৌ-বাচ্চা নিয়ে নিখোঁজ।
দুদিন আগে বৃদ্ধ রহমান তাদের কাছ থেকে একটা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পেয়েছেন। তাতে লেখা, ‘আমরা সবাই এক সঙ্গেই আছি, চিন্তার কিছু নেই’।
তিনি জানান, তার দুই ছেলে ইজাস ও শিয়াস সালাফি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। খবরের কাগজ পড়া, টিভি দেখারও বিরোধী ছিল তারা। চাইত বাবা-ও তাদের মতো লম্বা দাড়ি রাখুন। ঘরের দুই বউ, যার একজন ডেন্টিস্ট ও একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, তাদেরকেও তারা ভীষণ গোঁড়া ইসলামপন্থী করে তুলেছিল।
কিছু দূরেই হাফিজুদ্দিনের বাড়ি, ২৩ বছরের যে যুবক চার মাস আগেই বিয়ে করেছে, উধাও হয়ে গেছে সেও।
তার বাবা এ হাকিম বলেন, চোখের সামনে ধীরে ধীরে তার ছেলে বদলে যায়। বি.কম পড়া ছেড়ে দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা শুরু করে। সে চাইত বাড়িঘর বেচে ধর্মীয় কৃচ্ছ্রতার জীবন যাপন করতে, এমনকী নবীর (হযরত মুহাম্মদ স.) যুবক বয়সের মতো ভেড়া চরিয়ে জীবন ধারণ করতে। নিমিশা নামে ত্রিবান্দ্রমের এক হিন্দু পরিবারের মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম নেন ফতিমা। বিয়ে করেন কলেজের বন্ধু ইসাকে।
তার মা বিন্দু বলেন, তিনি এখনও বিশ্বাস করতে চান না তার মেয়ে ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছে। গত ১৮ মে থেকে সে নিখোঁজ এবং তখন থেকে একবারও ফোনে সে মার সঙ্গে কথা বলেনি।
তার জা আয়িশা, যে খ্রীষ্টান থেকে মুসলিম হয়েছে, সেও তার স্বামী ইয়াহিয়াকে নিয়ে উধাও।
বিন্দু জানান, এদের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, তারা কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না।
রাজ্য সরকার এই নিখোঁজ ব্যক্তিদের গতিবিধি নিয়ে তদন্ত করতে নেমে দেখেছে, এরা কেউ শ্রীলঙ্কা, কেউ লাক্ষাদ্বীপ বা কেউ মুম্বাই হয়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন।
তবে কেরালার পুলিশ-প্রধান লোকনাথ বেহেড়া জানান, তারা এই মুহুর্তে কোথায় তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। বেহেড়া বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তদন্ত শুরু করলেও তাদের ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কোনও খবর মেলেনি।