
আন্তর্জাতিক ডেস্ক – পুলিশ ফ্রান্সের নিসের হামলাকারী অর্থাৎ লরির চালককে চিহ্নিত করেছেন। হামলার ঘটনার পর পুলিশ লরিতে পাওয়া কাগজপত্র থেকে হামলাকারীর পরিচয় সনাক্ত করে।
ফ্রান্সের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, ৩১ বছর বয়সী এই তরুণের নাম মোহাম্মদ লাহৌআইজ বৌহলেল। তিনি তিউনিসিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসী নাগরিক।
জানা যায়, সে এই নিস শহরেই থাকতো। পুলিশ ছোটখাটো অপরাধী হিসেবেই তাকে চিনতো। কিন্তু জঙ্গিদের ওপর নজরদারির তালিকায় তার নাম ছিল না।
ব্যক্তিগত জীবনে বৌহলেল ছিলেন বিবাহিত এবং ৩ ছেলেমেয়ের বাবা। দুই বছর আগে স্ত্রীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগে তারা আলাদা বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ায় সে হতাশায় ভুগছিলো। নিস শহরে রেলওয়ে স্টেশনের কাছের বাড়িতে তিনি একা থাকতেন।
বৌহলেল থাকতেন নিস শহরেই। ডেলিভারি ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে তিনি কাজ করতেন। ডেইলি মেইলের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, গাড়ি চালানো অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে এর আগে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন বৌহলেল। ওই দুর্ঘটনায় চারটি প্রাইভেট কার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
তাঁর বাবা শুক্রবার এএফপিকে জানান, তার ছেলের এই হামলার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। সে হতাশ ছিল।
পুলিশ শুক্রবার তার বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় প্রতিবেশীরা জানান, হামলাকারী কারও সঙ্গে মেলামেশা করত না, কেউ ডাকলে সাড়াও দিত না। তাঁদের বক্তব্য, বৌহলেলকে ধর্মীয় আচার পালন করতেও দেখা যায়নি।
সেবাস্তিয়ান নামে বৌহলেলের এক প্রতিবেশী বলেছেন, এই হামলাকারী সবসময় একা থাকত। তবে তার মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামি দেখা যেত না। সে খাটো ঝুলের প্যান্ট, বুট পরে ঘুরত। তার একটি মোটরবাইক এবং একটি ভ্যান ছিল। মোটরবাইকটি সে নিজের ঘর পর্যন্ত নিয়ে যেত।
অন্যান্য প্রতিবেশীরাও বৌহলেল সম্পর্কে একই কথা বলছেন। তবে এক মহিলা বলেছেন, তাঁর দুই মেয়ের দিকে মাঝেমধ্যেই তাকিয়ে থাকত এই যুবক। সেই কারণে তাকে নিয়ে তিনি কিছুটা চিন্তিত ছিলেন।
আরেক প্রতিবেশী নাসিম বলেন, বৌহলেল স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে নিসের এই ব্লকের ফ্ল্যাটে থাকতেন। আমি তার কাছের ফ্ল্যাটেই বাস করতাম। তিনি মৌলবাদী মুসলিম ছিল না। মদ পান করতেন, মেয়েদের পেছনে লেগে থাকতেন, নাইটক্লাবে যেতেন। কখনোই মসজিদে যেত না। তিনি কোনোভাবেই ধার্মিক ছিলেন না। দু’বছর আগে চমৎকার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশ ওই লরির ভেতর থেকে কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। খবরে বলা হচ্ছে, লরিটি দুদিন আগে নিস এর পশ্চিমের এক শহরের একটি রেন্টাল ফার্ম থেকে ভাড়া করা হয়েছিলো। ট্রাকে পাওয়া কাগজপত্রগুলো ভাড়া সংক্রান্ত ছিল।
সড়ক দিয়ে লোকজনের ওপর দিয়ে ছুটে যায় লরিটি। লরির ভেতর থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে। হামলাকারীর পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে লরিতে যেসব অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিলো, পরে দেখা গেছে সেগুলো খেলনার।
এছাড়া লাওয়েজের সাবেক স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে বাস্তিল দিবস উদযাপনের জন্য ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নিসের প্রমেনাদে দেজ অ্যাংলেইসে আতশবাজি প্রদর্শনী দেখতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় ২০ টনের একটি ভারী ট্রাক নিয়ে বৌহলেল বেপরোয়াভাবে ওই জমায়েতের দিকে ছুটে যান। এ সময় আতঙ্কিত লোকজন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। এ পর্যন্ত বৌহলেলের ট্রাক চাপায় ৮৪ জন নিহত ও ২০২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে বৌহলেলের মৃত্যু হয়। নিহতদের মাঝে ১০জন শিশুও ছিল।