

সময়ের কণ্ঠস্বর , ফিচার ডেস্ক-
”মা ও বোনেদের ওপর কোনও অন্যায় সহ্য করা হবে না। মানা হবে না কোনও রকম সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদও। মুসলিম মা ও বোনেদের রক্ষা করতেই হবে। মুসলিম মা ও বোনেদের সব সময় সমান অধিকার দিতে হবে। কেউ টেলিফোনে তিন তালাক বললেই, মুসলিম মা ও বোনেদের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না”।
মুসলমানদের তিন তালাক নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলে এমন মন্তব্য করে বেশ আলোচনায় চলে এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভারতীয় মুসলিম সমাজে প্রচলিত তিন তালাক পদ্ধতি নিয়ে যে বিতর্ক চলে আসছে তা নিয়েই নিজের অবস্থান ব্যক্ত করে উত্তরপ্রদেশে এক জনসভায় এই পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন তিনি।
একই জনসভায় মোদী আরও জানান,
“মায়ের গর্ভেই মেয়েকে হত্যা করলে তাঁকে শাস্তি যেমন পেতেই হয়”, কন্যাভ্রূণ হত্যার প্রসঙ্গ টেনেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের সমান অধিকার নিয়ে সোচ্চার হন মোদী। তিনি আরও বলেন,“রাজনৈতিক আদর্শ আর ভোট এক নয়। ভোটের রাজনীতি করে মুসলিম মহিলাদের প্রতি অন্যায় হলে তা সরকার মেনে নেবে না”।
এদিকে তিন তালাকের প্রশ্নে ভারতে মুসলিম সমাজে সত্যিই কি নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে এবং এই বিষয়ে মোদীর মন্তব্যের পর তা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা ।
নরেন্দ্র মোদী যদিও বলেছেন, তিনি মুসলিম সমাজের নারীদের ভালো করার জন্যই এ কথা বলছেন। কিন্তু এ নিয়ে অনেকের মাঝেই সন্দেহ আছে। সামনের বছর ভরতের উত্তর প্রদেশের রাজ্য বিধান সভার নির্বাচন। উত্তর প্রদেশের মুসলিম নারীদের ভোট পাবার জন্য মোদী তিন তালাকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বলেও মনে করছেন অনেকেই।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে রাজনৈতিক গবেষক সাবির আহমেদ বলছেন তিন তালাক নিয়ে এ বিতর্ক ভারতের মুসলমানদের বড় অংশের মধ্যে নেই। এটা খুবই শহর কেন্দ্রিক অ্যাকটিভিজম বলে তিনি বর্ণনা করেন। তিনি মনে করেন এটা সবার কণ্ঠস্বর নয়।
তিন তালাকের বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোচ্চার হবার হবার পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে ধারনা পোষণ করেন তিনি ।
গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, ” এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে ভারতের মুসলিম নারীদের জন্য। শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে তারা বহু পিছিয়ে আছে। এসব বিষয়ে যথেষ্ট করা হচ্ছে না । অথচ এগুলোর (তিন তালাক) উপর জোর দেয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন ভারতের সমাজে মুসলমানরা এমনিতেই পিছিয়ে আছে। তাদের মধ্যে মুসলমান নারীরা আরো বেশি পিছিয়ে।
মুসলমান নারীদের জন্য সত্যিকারের উন্নয়ন করতে হলে তাদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের প্রতি সবার আগে জোর দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
ইতমধ্যে, ভারতের সরকার সুপ্রিম কোর্টেও তিন তালাকের বিরোধিতা করেছে এবং তিন তালাক নিয়ে একটি জনমত যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশটির আইন কমিশন।
তবে ভারতে মুসলিমদের শক্তিশালী সংগঠন অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড এক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে।