

স্টাফ রিপোর্টার, সময়ের কণ্ঠস্বর: কার্যকারণ ভঙ্গুর এই পৃথিবীতে কোন কিছুই যেন অকারণে ঘটে না । ঘটন অঘটনের মাঝে এমন কিছু ঘটে যা বিস্মৃতি হয়ে হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে । আর্তনাদ যেন হাহাকারে পরিণত হয়ে মিশে যায় বাতাসে । আজকাল আধুনিকতার নামে প্রেমের সম্পর্ককে কলঙ্কিত করতে এক মুহূর্ত সময় লাগে না আমাদের । ব্যতিক্রমী প্রেমের পবিত্র সম্পর্ক যেন বিরল !
আর এই বিরল ঘটনার সাক্ষী স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া, সর্বদা হাস্যোজ্জল, গল্পপ্রিয়, সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখা মনিকা রহমান এবং প্রাইভেট ফার্মে চাকরিরত উদ্যমী, সাহসী প্রাণ মামুনুর রশিদ । দীর্ঘ ৬ বছরের প্রেমের রঙ্গিন জীবন । এবার দুজন দুজনের হাত ধরে স্বপ্ন গুলোর বাস্তব রূপ দিতে সংসার জীবনে পাড়ি জমাবার পালা । পরিবারের মতামত নিয়ে ব্যাপক ধুমধামের মাধ্যমে রাজধানী বংশালের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নববধূর সাজে বৌ হয়ে আসে মনিকা । কিন্তু হাতের মেহেদীর রঙ শুকানোর আগেই ঘটে গেল বিপত্তি, দীর্ঘ স্বপ্নের অবসান, সাধনারা স্মৃতি , এখন বিস্মৃতি । আজকে পরিবার ও সহপাঠীরা শোকে স্তব্ধ ।
জানা গেছে বিয়ের পর গতকাল বুধবার রাতে কক্সবাজারে মধুচন্দ্রিমায় যাচ্ছিলেন এ নবদম্পতি। পথে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পদুয়া এলাকায় বাস-ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন দুজনেই। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মনিকাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বামীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনায় তিনজন নিহতসহ ১৩ ব্যক্তি আহত হন। নিহত অপর দুই যাত্রী মেহেরপুরের রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও চাঁদপুরের কচুয়ার বাসিন্দা সোহাগ (৩২)।
মনিকার ছোট বোন অনিকা আক্তার জানান, গত ২১ ডিসেম্বর বংশালের একটি কমিউনিটি সেন্টারে মামুনুর রশিদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বুধবার রাতে তারা হানিফ পরিবহনে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। পরে সকালে আমরা খবর পাই কুমিল্লায় তাদের বাস দুর্ঘটনা হয়েছে। পরে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে আসা হয়। সকাল ১০টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মনিকাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অনিকা বলেন, বংশাল থানার চানখারপুল লেনের ৫৭/২ নম্বর বাসার সাততলায় তারা থাকতেন। এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে তারা অবকাশে যাচ্ছিলেন।
মনিকার সহপাঠী সামিয়া বলেন, ইংরেজী বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী মনিকা ব্যাচের সিআর (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) ছিল। ক্লাসের সবাইকে হাসি আনন্দে মাতিয়ে রাখার অসম্ভব ক্ষমতা ছিল তার। ব্যাচের সবার খোঁজ-খবর রাখত সে। মনিকার এভাবে চলে যাওয়া কোনো ভাবেই মানতে পারছি না।