
আবদুল লতিফ লায়ন, জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরের প্রত্যন্ত পল্লী এলাকার আলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। তিন বছর ধরে জেএসসি এবং এসএসসিতে শত ভাগ পাশের কৃতিত্ব বহন করছে। এটি জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চান্দেরর হাওড়া নামক প্রত্যন্ত পল্লীতে অবস্থিত।
এ বিদ্যালয়টির জমি আছে ঘর নাই। আছে শুধু পাঁচ দরজার এক ঘর। ওই ঘরেই চারটি শ্রেণী কক্ষ। একই ঘরে প্রধান শিক্ষকের অফিসসহ সহকারী শিক্ষকদের বসার জায়গা। শ্রেণী কক্ষের চরম সংকট চলছে। আর শ্রেণী কক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করেন শিক্ষকরা।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চান্দেরর হাওড়া নামক দুর্গম পল্লী এলাকায় গড়ে উঠেছে আলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির দুই পাশে দুইটি গ্রাম ও অন্য দুই পাশে সবুজ ফসলের মাঠ। আশেপাশের প্রতিটি কাঁচা রাস্তাই ভাঙ্গাচুড়া ও খানা খন্দকে ভরা। এ বিদ্যালয়ের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোন পাকা সড়ক নেই। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে শিক্ষাথীরা পায়ে হেঁটেই বিদ্যালয়ে আসে। এ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৪৭ জন। তন্মধ্যে ৪৩০ জনই ছাত্রী। গত তিন বছরে ৩৭৭ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সকলেই কৃতিত্বে সাথে পাশ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। এছাড়াও গত তিন বছরে ১৩৩ জন শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সকলেই কৃতিত্বে সাথে পাশ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে।
সরেজমিন ঘুরে আরও জানা গেছে, বিদ্যালয়টির মাঠে চারজন শিক্ষক চারটি জায়গায় বেঞ্চ বসিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন। অপরদিকে বিদ্যালয় গৃহের চারটি শ্রেনী কক্ষে অপর চারজন শিক্ষক পাঠদান করছেন। প্রতিটি শ্রেণী কক্ষেই শতাধিক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে বসে পাঠ গ্রহণ করছে। এ বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য কোন কমন নেই। নেই কোন শৌচাগার। এ বিদ্যালয়টির মাঠ ও মুল গৃহ সংলগ্ন ১ একর ৮০ শতাংশ জমি থাকলেও অর্থের অভাবে গৃহ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি পুরনো গৃহের পাশের আরেকটি কাচা গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে। শ্রেণী কক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করেন শিক্ষকরা।
এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহেল কাফি, মোজাম্মেল হক, জাহিদুর রহমান এবং দশম শ্রেণীর ছাত্রী শিলা আক্তার, তাছলিমা আক্তার, আঞ্জুয়ারা বেগম ও শাপলা বেগম এর সাথে কথা হলে তারা জানান, বিদ্যালয়টিতে কোন কমন রুম ও শৌচাগার নাই। এতে মাঝে মধ্যেই তাদের খুব কষ্ট হয়। কারণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তাদের যেতে হয় বিদ্যালয় সংলগ্ন গ্রাম দুটির বাড়ী ঘরগুলোতে।
আলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল্লাহ জানান, জাামালপুরের প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয়। বিদ্যালয়টি গত তিন বছর ধরে শত ভাগ পাশের গৌরব অর্জন করেছে। কিন্তু অর্থের অভাবে গৃহ নির্মাণ করতে না পারায় খোলা আকাশের নিচে বসিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে। এ বিদ্যালয়টির জন্য ১০টি শ্রেণীকক্ষ এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কমন রুম ও শৌচাগার নির্মাণ করা জরুরী হলেও অর্থাভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।
জামালপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফরোজা বেগম সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, “সম্প্রতি আমি আকস্মিকভাবে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। জাামালপুরের প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিতে শ্রেণী কক্ষের সমস্যা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কমন রুম ও শৌচাগারের সমস্যা দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছি”।