
রবিউল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, সময়ের কণ্ঠস্বর, ঢাকা
রাজধানী থেকে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে অবকাশ যাপন অথবা পিকনিকে গেলে চুক্তিতে মেলে ‘ভাড়া করা বান্ধবী!’ এ খবর বেশ পুরোনো। দু-পক্ষের সমঝোতায় এসব ভাড়ায় সংগ্রহ করা বান্ধবীদের নিয়ে বেড়াতে যাবার ঘটনা এতদিন এতদিন অনেকটা ‘চুপি চুপিই’ ঘটেছে। তবে এ দফায় হয়তো ‘ভাগ্য অনুকুলে’ ছিলোনা রাজধানী ঢাকা থেকে ‘বান্ধবী ভাড়া’ নিয়ে কক্সবাজারে পিকনিকে যাওয়া তিন যুবকের।
ঢাকা থেকে পুরোনো এক ‘ বান্ধবীকে’ নিয়ে পিকনিক থেকে ফেরার পর দারুন বেকায়দায় পড়েছেন রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার স্বামীবাগ এলাকার কয়েকজন যুবক।
ঘটনার শিকার ভুক্তভোগীদের বক্তব্য ও মামলা সুত্রে জানা গেছে, স্বামীবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবছর শীত মৌসুমে আয়োজন করেন পিকনিকের। অন্যান্য বছরের মতো এবারও আয়োজন ছিল তাদের। গত ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি তিনদিনের বান্দরবান ও কক্সবাজারে ভ্রমণে (পিকনিক) বান্ধবী নিয়ে যাওয়ারও অনুমতি ছিল আগের মতই ।
পিকনিকে অংশ নেয়া গেণ্ডারিয়ার স্বামীবাগের বাসিন্দা তিন যুবক হালিম, ইকবাল এবং আইয়ুব এই সুযোগে তাদের পূর্বপরিচিত এক বান্ধবী শায়লা (ছদ্মনাম )কে বান্দরবান-কক্সবাজার ভ্রমণে সঙ্গী করেন।
তিন দিনের ভ্রমণ থেকে ‘স্বাভাবিক ভাবে ফেরার দুদিন পর আকস্মিক তিন বন্ধুর নামে গেণ্ডারিয়া থানায় ধর্ষণের মামলা ঠুকে দেন শায়লা । প্রাথমিকভাবে মামলার অভিযোগে অভিযোগকারিনী শায়লার বক্তব্যে নানা অসঙ্গতি ধরা পড়লেও এ মামলায় পুলিশ শনিবার ইকবাল এবং আইয়ুব নামের অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে। ওই মামলার অপর আসামি হালিম পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ওই দুই যুবককে একদিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
রোববার গেণ্ডারিয়া থানা হেফাজতে থাকা দুই যুবকের সাথে আলাপকালে তারা দাবী করেন, ‘ তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা পুরোপুরি মিথ্যা। ভুক্তভোগী ইকবাল বলেন, ‘ভ্রমণের সময় শায়লা তাদের আরেক বন্ধু হালিমের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন। কথিত ওই বান্ধবীর সঙ্গে তাদের দু’জনের শারীরিক কোনো সম্পর্কের ঘটনা ঘটেনি। ঐ দুই যুবকের অভিযোগ ঢাকায় ফেরার পর ভ্রমনের সঙ্গী হতে চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত ‘টিপস’ দাবী ছিলো শায়লার। সেটা দেয়নি তাই এই এই পরিকল্পিত অভিযোগ।’
ঐ যুবতীর করা মামলাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা গেণ্ডারিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহবুব আলম সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, ‘দায়েরকৃত মামলাটিতে অভিযোগকারিনীর বক্তব্যে বেশ কিছু ‘অসঙ্গতি’ পেয়েছেন তিনি। মামলা দায়েরের সময় ঘটনার স্থান কাপ্তানবাজার উল্লেখ করা হলেও প্রাথমিক তদন্তের সময় পিকনিকে অংশগ্রহন করা অন্যদের সাথে আলাপে তদন্তকারী কর্মকর্তা জেনেছেন, বাস্তবে তারা প্রত্যেকেই ওই সময় কক্সবাজার ও বান্দরবান ভ্রমণে ছিলেন।’
এদিকে, অভিযুক্তদের আটকের পর গেণ্ডারিয়া থানায় আসেন অভিযোগকারিনি শায়লা। ঘটনা সম্পর্কে তার কাছ থেকে জানতে চাইলে কিছুটা ক্ষুব্ধ হন তিনি। এসময় কক্সবাজার ট্যুরের বিষয়টি গোপন করে গেণ্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং বলেন, যা বলার তিনি আদালতেই বলবেন, সাংবাদিকদের নয়। এসময় ‘ভাড়ায় চুক্তিতে বান্ধবী’ হবার ঘটনাও অস্বীকার করেন তিনি।
প্রাথমিক তদন্তের বরাতে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহবুব আলম সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানিয়েছেন, বাদি মামলায় যে মোবাইল নম্বর উল্লেখ করেছেন সেটি তার নামে রেজিস্ট্রিকৃত নয়। তবে অভিযুক্তদের দাবীমতে এভাবে ‘চুক্তিতে বান্ধবী’ নিয়ে বেড়াতে যাবার বিষয়টিকেও অনৈতিক উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা জানান, ইদানিং এমন ব্যপার অহরহ ঘটছে, নেপথ্যের ঘটনা যাই হোক এভাবে ভয়নক কোন অপরাধ সংঘটিত হতে পারে যে-কোন সময়। লোভে পড়ে এসব ঘটনা ঘটানোর আগে সতর্কতা জরুরী সবার।