
রবিউল ইসলাম (রবি), সময়ের কণ্ঠস্বর- রুপালি পর্দায় শাকিব অপুর একসঙ্গে পথচলা শুরু ২০০৬ সাল থেকেই। ওই বছর তারা জুটি বেঁধে কাজ করেন এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে। প্রথম ছবিতেই এই জুটির বাজিমাত। তারপর একাধারে একসঙ্গে পথচলা।
এরপর দীর্ঘদিন মন দেওয়া-নেওয়া শেষে ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গতবছর কলকাতায় তাদের ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। দীর্ঘদিন আড়ালে থাকার পর চলতি বছরের এপ্রিলে আকস্মিক শিশু সন্তানকে নিয়ে টেলিভিশন লাইভে এসে রীতিমত চমক সৃষ্টি করে শিরোনামে আসেন অপু বিশ্বাস।
এ সময় তিনি জানান, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে শাকিব খানকে বিয়ে করেছেন তিনি। বিয়ের পর অপু বিশ্বাসের নাম হয় অপু ইসলাম খান। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরে কলকাতার এক হাসপাতালে জন্ম নেয়া ছেলের নাম রাখা হয় আব্রাহাম খান জয়।
অপু সন্তান নিয়ে টেলিভিশনে হাজির হওয়ার পর ঢাকাই ছবির ‘সুপারস্টার’ সমালোচিত হন। এরপর নানা কারণে বেশ কয়েকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তারা। বিশেষ করে, মাঝে মধেই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার খবর চাউর হচ্ছিল।
সবশেষ গেল মাসেও অপুকে তালাক দেয়ার খবরটি বেশ চাউড় হয়েছিল। কিন্তু সেসময় মিডিয়াকে কিছু জানাতে রাজি হননি শাকিব। এমনকি অপু বিশ্বাস নিজেও একটি সংবাদ সম্মেলন করে ডিভোর্সের বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই গুজবই বাস্তবে পরিণত হলো। বিয়ের খবর প্রকাশের আট মাসের মাথায় বিবাহবিচ্ছেদে গেলেন তারা।
শাকিব খান বর্তমানে ‘নোলক’ নামে একটি ছবির শুটিং করতে ভারতের হায়দ্রাবাদের রামুজী ফিল্ম সিটিতে অবস্থান করছেন। ভারতে শুটিংয়ে যাওয়ার মুহূর্তে অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন তিনি। এই ডিভোর্স পেপার পাঠানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে।
শাকিব দেশের বাইরে থাকায় জানা যায়নি কী লেখা আছে ওই ডিভোর্স পেপারে। তবে আইনজীবী সিরাজুল ইসলামের বয়ান থেকে জানা যায়, অপুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে তালাকনামা পাঠিয়েছেন শাকিব।
আইনজীবী বলেন, গত ২২ নভেম্বর অপু বিশ্বাসের ঢাকার বাসা ও বগুড়ার ঠিকানায় রেজিস্ট্রি করা হলফনামা আকারে তালাকনামা পাঠানো হয়। নায়ক শাকিব খান মনে করেন তার স্ত্রী তার কথা মোতাবেক চলাফেরা করছেন না। কারণ তিনি ধর্মান্তরিত করে অপু বিশ্বাসকে বিয়ে করেন। পরে নাম রাখা হয় অপু ইসলাম খান। শাকিব রূপালী জগতের মানুষ। এ জন্য চিন্তা করেছেন ধর্মান্তরিত হয়ে তার স্ত্রী ধর্ম-কর্ম করে সওয়াব অর্জন করবেন। কিন্তু শাকিবের সে আশা পূরণ হলো না। এমনকি তিনি স্বামী শাকিব খানের কোনো নির্দেশ মেনে চলেন না বলেও জানান ওই আইনজীবী।
এছাড়া তিনি তালাকনামায় আরও উল্লেখ করেন, গত ১৭ নভেম্বর ছেলে আব্রাম খান জয়কে কাজের মেয়ে শেলীর কাছে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে কলকাতায় যান অপু। এমন খবর পেয়ে ওইদিনই ছেলেকে দেখতে অপুর নিকেতনের বাসায় ছুটে যান শাকিব। কিন্তু তালাবদ্ধ থাকায় দেখা করতে পারেনি ছেলে জয়ের সঙ্গে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলেকে উদ্ধারে থানায় জিডিও করেন শাকিব খান।
কলকাতা থেকে ফিরে এসে অপু জানান, চিকিৎসা করাতে কলকাতা গিয়েছিলেন তিনি। তবে এই কথা নাকি মানতে নারাজ স্বামী শাকিব খান। আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি অভিযোগ করেন, অপু নাকি ছেলে জয়কে কাজের মেয়ের কাছে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে কলকাতায় কথিত বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন।
পরবর্তী প্রক্রিয়া জানতে চাইলে আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, নিয়ম হলো ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সালিশি পরিষদ দুজনকে ডেকে নিয়ে বসবে যেন সংসারটি ভেঙে না যায়। যদি শাকিব খান তারপরও মনে করেন এটাই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, তবে ৯০ দিন পর তালাকনামা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যাবে।
এদিকে শাকিব খানের পাঠানো ডিভোর্স লেটার এখনও হাতে পাননি বলে দাবি করেছেন অপু বিশ্বাস। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে অপু বিশ্বাস জানান, আমি এখনও কোনো চিঠি পাইনি। বিষয়টি আমি গণমাধ্যমের খবরে জেনেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাকিব যদি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকে তাহলে আমার আর কী করার আছে। আমার পরিবারের লোকদের সঙ্গে বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব। আবারও বলছি, বিষয়টি যদি সত্যি হয় তাহলে আমাদের দুজনেরই ইমেজ নষ্ট হবে। বিশেষ করে আমাদের সন্তান জয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাবটা বেশি পড়বে।
শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হলো, অপুকে তালাকনামা পাঠালেন শাকিব!
যে কারণে দীর্ঘ ৯ বছরের সংসারের ইতি টানলেন শাকিব
সময়ের কণ্ঠস্বর/রবি