
এইচ এম মিলন, কালকিনি (মাদারীপুর) থেকে- করোনায় ভালো নেই মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। এ উপজেলার চরবিভাগদী গ্রামের মৃৎশিল্প’র ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা পাল বংশের লোকদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এক সময় চরবিভাগদী গ্রামের মৃৎশিল্প’র জৌলুস ছিল। এ শিল্পে জড়িয়ে ছিল এখানের শতাধিক পরিবার। এখন মাত্র ৫ থেকে ১০টি পরিবার কষ্টে-শিষ্টে তাদের পূর্ব-পুরুষদের এ পেশা ধরে রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারনে সম্পুর্নরুপে বন্ধ হয়ে গেছে এ মাটির কাজ। তাই এই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই অর্ধহাড়ে দিন কাটাচ্ছেন।
চরবিভাগদী গ্রামের প্রবীণ মৃৎশিল্পের কারিগর কমল পাল বলেন, ‘লাভ লসের হিসাব করি ন, মাডির মায়ায় এই ব্যবসায় হরি রইছি। বাপ-দাদার কাজ ছাড়ি কি করি। করোনার আমাগো হগল কাজ বন্ধ হইয়া গেছে। মোগো বাচঁনে ধুম এহন।
তার মতই মাটির মায়ায় পূর্বপুরুষদের পেশায় এখনও কেউ কেউ টিকে আছেন এবং বর্তমানের সাথে তালমিলিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন। তাদের আরেকটি আক্ষেপ, আগে মাটি বিনামূল্যে সংগ্রহ করলেও এখন তা কিনতে হয়। এরপর পণ্য প্রস্তুত করার পরও ন্যায্যমূল্য মিলেনা।
এক কালের ঐতিহ্যের মাটির তৈরি বাসন, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুল এখন প্ল্যাস্টিকের দখলে। ফলে কালকিনি উপজেলার চরবিভাগদী গ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের জৌলুস আর নেই। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্যের কারণেই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন চরবিভাগদী গ্রামের প্রবীণ মৃৎশিল্পীরা। এছাড়া মৃৎশিল্প’র উপকরণও তাদের জন্য সহজলভ্য করা উচিত।
এক সময় এ গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার পরিবারও প্রত্যক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। পালরা খোলা, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুলসহ ছোট-ছোট খেলনা ইত্যাদি সব জিনিসপত্র তৈরি করত। এখানকার তৈরি মৃৎশিল্পের অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি থাকলেও এখন শুধুমাত্র দধির পাত্র ও পিঠার খোলা তৈরি করে কোন রকমের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ অঞ্চলে খোলা পাত্রের কদর বেশী রয়েছে।
একটি খোলা তৈরিতে মাটি ও পোড়ানো বাবদ প্রায় ৫ টাকা খরচ হলেও তা বাজারে বিক্রি হয় ১০ টাকা। এর মধ্যেই রয়েছে শ্রম ও মাল বহনের খরচ। ফলে লাভের মুখ তারা দেখে না। অথচ ঐ একটি খোলা এক হাত ঘুরে বাজারে খুচরা ক্রেতা কিনছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ফলে সহজেই অনুমেয় মূল মুনাফা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের হাতে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মৃৎশিল্পীরা এ পেশার প্রতি হতাশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান প্রজন্ম এ ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।
মৃৎশিল্পের নিপুণ কারিগরেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অনেকটা অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেক পুরুষ এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগের মত দামে বিক্রি করতে পারছে না। মাটির এ সকল পাত্রের চাহিদাও আগের মত নেই।
মৃৎশিল্পী রানু পাল বলেন, ‘পূর্বপুরুষের পেশা বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে করোনায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, এই করোনা পরিস্থিতিতে মৃৎশিল্পের কারিগরদের সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। এবং তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।