
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সাগরের বুকে প্রায় ছয় মাস ভাসমান থাকার পর অবশেষে ৩০০ রোহিঙ্গা মুসলমান আজ (সোমবার) দিনের প্রথম ভাগে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের মাটিতে নামার সুযোগ পেয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আচেহ প্রদেশের পুলিশ জানিয়েছে, একটি কাঠের নৌকায় করে এসব রোহিঙ্গা জীবনের ভয়ে মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়েছেন। আচেহ প্রদেশের স্থানীয় জেলেরা ওই নৌকা শণাক্ত করে এবং মধ্যরাতের পরপরই রোহিঙ্গা মুসলমান উজুং বালাং সৈকতে নামেন। নৌকার আরোহীর মধ্যে ১৮১ জন নারী ও ১৪টি শিশু রয়েছে।
স্থানীয় রেডক্রস কমিটির প্রধান জুনাইদি ইয়াহিয়া জানান, রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে একটি অস্থায়ী জায়গায় রাখা হয়েছে।
জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত আর অবসন্ন হয়ে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার মতো মানবিকতা দেখানোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত মার্চ মাসের দিকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আশ্রয়ের জন্য পাড়ি জমিয়েছিল তিনশোর বেশি শরণার্থী। নৌকায় চেপে বেরিয়ে পড়েছিল নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে। কিন্তু তারপর এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের।
করোনার কারণে রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার সরকার। ফলে মাঝ সমুদ্রে নৌকাতেই জীবন কাটাতে হয়েছে ওই শরণার্থীদের।
অবশেষে সোমবার সকালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের উত্তর অবস্থিত উজং ব্লাং গ্রামের কাছে সমুদ্র সৈকত থেকে কিছুটা দূরে একটি কাঠের নৌকা ভাসতে দেখেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। খোঁজখবর নিতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, গত ৬ মাস ধরে সমুদ্রেই ভেসে বেড়াচ্ছেন নৌকার যাত্রীরা।
মানবিকতা দেখিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৌকাটিকে আচেহ প্রদেশের সৈকতে নিয়ে যান তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে অসহায় শরণার্থীদের উদ্ধার করে একটি অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে, গত জুন মাসে ১০০’র বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানকে উদ্ধার করেছিল আচেহ প্রদেশের জেলেরা। ওই দলে ৪৯ জন নারী ও ৩০টি শিশু ছিল। প্রথম দিকে ইন্দোনেশিয়ার সরকার এসব রোহিঙ্গা মুসলমানকে দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল।
মিয়ানমার সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধদের হামলা-নির্যাতনের মুখে টিকতে না পেরে লাখ রাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।