
কামরুজ্জামান মিন্টু, ষ্টাফ রিপোর্টারঃ নির্যাতনের স্বীকার গৃহকর্মী নিশির (১০) চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান। প্রাথমিক পর্যায়ে নগদ ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গৃহকর্মীর পিতা মজিবুর রহমানের হাতে মেয়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা তুলে দেন এবং চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার রাজাবাড়িয়া গ্রামের দরিদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী মজিবুর রহমানের মেয়ে নিশি আক্তার। নিশিকে পাঁচ বছর বয়সে রেখে মা দিতি আক্তার নতুন বিয়ে করে চলে যান অন্যত্র। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটছিল প্রতিবন্ধী মজিবুরের। অভাব দেখে একই এলাকার হেলাল শিশুটিকে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে দেন। প্রতি মাসে তিন হাজার ৫০০ টাকা বেতনে দেওয়া হয় কাজে। ঢাকার দৈনিক বাংলা মোড় এলাকার অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মিজানুর রহমান বাবুলের বাসায়। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ভৈরব বাজারে। তিনি বসবাস করেন রাজধানীর ইন্দিরা রোডের একটি বাসায়। গৃহকর্মী নিশি বাসায় কাজে যাওয়ার পর থেকেই গৃহকর্ত্রী শারমিন রহমান মুন্নির সাথে গৃহকর্তা মিজানও নির্যাতন চালাতেন।
নিশির বাবা মজিবুর রহমান বলেন,নিশিকে গত তিন বছর ধরে ঢাকার বাসায় নৃশংস নির্যাতন চালানো হতো। গত ছয় মাস ধরে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রভাবশালী অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তা মিজান ও তার স্ত্রী মুন্নী মেয়েকে হাতপা বেঁধে লাঠি পেটা, গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেন এবং গরম পানি ঢেলে সারাদেহ ঝলসে দেন। অনেক অনুনয় বিনয়ের পর শিশু নিশিকে ফেরত দিতে রাজি হয় ওই দম্পতি।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজ মোড়ে আহত গৃহকর্মী নিশিকে তার বাবা মুজিবুর রহমানের কাছে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন ওই গৃহকর্তা ও তার স্রীকে।
পরে ওইদিন রাতেই নিশির বাবা মজিবুর রহমান বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী মুন্নী ও আরও একজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। গতকাল রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) গ্রেফতার মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রীকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হাইয়ের আদালতে তোলা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, শিশুটির শরীরজুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। নিশিকে তার বাবা মজিবুর রহমানের কাছে আহত অবস্থায় ফেলে যাওয়ার সময় চিৎকার চেচামেচি করলে স্থানীয়রা মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রীকে আটক করে পুলিশে দেয়। নিশির চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তির প্রস্তুতি চলছে।