
আবদুল্যাহ রিয়েল,ফেনী প্রতিনিধি: সোনাগাজীতে লেয়ার ও বয়লার খামারের বর্জ্যেরে দুর্গন্ধে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিবেশ অধিদফতর ও প্রাণী সম্পদ অফিসের অনুমোদনে ছাড়াই কোন ধরনের নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা না করেই দেড় শতাধিক খামারের ওই সব বর্জ্যে ফসলি ও পতিত জমিতে ফেলছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ফসল ও ফসলি জমি। বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিভিন্ন এলাকার মানুষের।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ও নবাবপুর অংশে প্রায় দেড় শতাধিক পোল্ট্রি খামারের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে এলাকা।
সোনাগাজীর নবাবপুর-আমিরবাদ অংশে কোন ধরনের নিয়ম নীতি না মেনে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মুরগীর খামার। এসব খামারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন খালে। এতে দূষিত হচ্ছে খালের পানি। ফলে দূর্গন্ধে একদিকে যেমন মানুষের জীবনযাপনে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে দুষিত পানি জমিতে ব্যবহার করায় নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। কমে যাচ্ছে উৎপাদন।
মুরগির বর্জ্যে ও নিষ্কাশিত পানিতে বিনষ্ট হচ্ছে খাল। দুর্গন্ধে অতিষ্ট এলাকাবাসী ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। মুরগির বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি দ্বারা আশে পাশের ৬ গ্রামেরও বেশি পরিবেশ ও ফসলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। আশপাশের জমিতে দিনে দুপুরে বর্জ্য এবং নিষ্কাশিত পানি ফেলায় জমিগুলোতে এখন আর কোন ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে না।
প্রতিকার চেয়ে কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন। জমি সেচ দিতে খালের পানি ব্যবহার করায় প্রায় দুই একর সূর্যমুখী ক্ষেত নষ্ট হয়ে হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন নবাবপুর ইউনিয়নের সফরপুরের সূর্যমুখী চাষিরা।
চাষীরা জানান, ক্ষেতে খালের পানি ব্যবহার করলেই দুই একদিন পরেই চারাগুলো মরে যায়। পানি দূষিত হওয়ায় বোরো ধান আবাদ করাও সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান স্থানীয় কৃষকেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী খালের দুইপাশে অপরিকল্পিতভাবে শ’খানেক মুরগীর খামার গড়ে উঠেছে। সেখানকার বর্জ্য কোন ধরনের পরিশোধন না করে সরাসরি খালের মধ্যে ফেলা হয়।
স্থানীয় কৃষক নওশা মিয়া জানান, গতবছর সূর্যমুখীর চাষ করে বেশ ভালো লাভবান হবার পর এবার ৭০শতক জমি বর্গা নিয়ে সূর্যমুখী চাষ করি। গত বছর পাশের একটি বাড়ির পুকুর থেকে পানি সেচ দিই। কিন্তু এ বছর ওই পুকুরের পানি কম থাকায় খালের পানি ব্যবহার করি। কিন্তু দুই তিন দিন পর জমির সকল চারাগাছ নষ্ট হয়ে যায়। এতে অন্তত ৫০হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
কৃষক বশির আহমদ জানান, বর্তমানে খালের পানি দুষিত হবার কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। একই অভিযোগ করেন, সূর্যমুখী চাষী মো: কামাল উদ্দিন, সানিয়াদ জুয়েলসহ আরও কয়েকজন কৃষক।
হাতেগোনা কয়েকটি মুরগীর খামারে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলেও অধিকাংশেই বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। এ ব্যাপারে মো: জসিম, মাঈন উদ্দিন নামে দুই খামার মালিক জানান, তারা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে এ সকল বর্জ্য শোধন করার ব্যবস্থা করবেন। খামারী মালিক সমিতি গঠন করে এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।