

আবদুল্যাহ রিয়েল,ফেনী প্রতিনিধি: পান বহুল প্রচলিত একটি মুখরোচক খাবার। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কমবেশি পানের চাষ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ফেনীর সোনাগাজীর চরদরবেশ ও বগাদানায় স্বল্প পরিসরে চাষ হচ্ছে পান।
এসব এলাকার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এক দশক পূর্বেও এখানে ব্যাপক হারে পান চাষ হত। কিন্তু বিগত তিন বছরে ১৭ হেক্টর থেকে কমে চাষ হচ্ছে মাত্র ১০ হেক্টর জমিতে। আনুসাঙ্গিক খরচ বেশি হওয়ায় এবং প্রশিক্ষণ ও সহায়তার অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পান চাষীরা। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে সোনাগাজীর এই ঐতিহ্য।
কৃষি অফিস বলছে, সরকারিভাবে কোন প্রশিক্ষণ বা প্রণোদনার সুযোগ নেই। তবে চাষীরা পরামর্শ চাইলে সকল বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।
পান চাষীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, একসময় এখানকার উৎপাদিত পান ফেনী জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হত নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে সোনাগাজী বাজার, দাসের হাট, কারামতিয়া ও কাজিরহাট থেকে সপ্তাহে দুই দিন পানগুলো সংগ্রহ করে জল ও স্থল পথে নিয়ে যেত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বর্তমানে উৎপাদন বাড়ানো, রোগ-ব্যাধি নির্মূল, সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারনা না থাকার কারণে নতুন করে পান চাষে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সেই সাথে পান চাষের আনুসাঙ্গিক উপাদানের খরচের পরিমান বেশি হওয়ায় পুরাতনরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পান চাষ থেকে। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে সোনাগাজীর এই পান শিল্প।
চরসাহাভিকারী গ্রামের পান চাষী যজ্ঞেশ্বর মজুমদার জানান, তার সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল এই পানের বরজ। তিনি ৬০শতক জমিতে পান চাষ করে বছরে অন্তত ২ লক্ষ টাকা আয় করতেন। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় পান চাষ কমিয়ে সেই জমিগুলোতে অন্যান্য সবজি চাষ করেন। পাশাপাশি গরু পালন করে পরিবারের যাবতীয় খরচ মেটান।
আরেক চাষী সমর মজুমদার জানান, তিনিও একসময় পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তিনি মাত্র ৪ কাঠা জমিতে পান চাষ করেন। পাশাপাশি গরুপালন ও কৃষিকাজ করেন। একই ধরনের কথা শুনিয়েছেন পান চাষী শেখ আহমদ, শ্রীনাথ মজুমদার, অনাথ মজুমদার, মুরালী মজুমদার ও বিমল মজুমদার। তারা আরও বলেন কৃষি অফিস থেকে যদি আধুনিক পদ্ধতিতে পান চাষের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগীতা পায় তাহলে পান চাষে আবারও সুদিন ফিরে আসবে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র নাথ জানান, সোনাগাজীর চরদরবেশ ও বগাদানায় ১০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। যা বিগত তিন বছরের ছেয়ে ৭ হেক্টর কম। এক্ষেত্রে সরকারীভাবে কোন প্রশিক্ষণের বা প্রণোদনার সুবিধা নেই। তবে চাষীরা যদি কোন পরামর্শ চায় তখন আমরা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করি। পান চাষীরা যদি প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করে তাহলে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।