

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে চলা আন্দোলনে ঘি ঢেলেছে ফাঁস হওয়া একটি অডিও ক্লিপ। ইতিমধ্যে তা ভাইরাল।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শোনা যায় উপাচার্যকে ।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীর দাবী, অডিওটি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের, তবে এটি ২০১৯ সালের।
শিক্ষার্থীরা জানান, হলের গেট রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার দাবিতে ২০১৯ সালে ছাত্রীরা আন্দোলন করেছিলেন। তখন আন্দোলনকারী ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এসব মন্তব্য করেছিলেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রী জানান, এই অডিও ক্লিপের বক্তব্য শুনেই বোঝা যায়, উপাচার্য কতটা নিচু মানসিকতার। তিনি মেয়েদের প্রতি কী ধারণা পোষণ করেন। তার এই বক্তব্য সব খানে ছড়িয়ে পড়া দরকার। এতে মানুষ বুঝতে পারবে আমরা কেন তার পদত্যাগ চাই। অডিও ক্লিপটি শুনতে পারেন ইউটিউবের এই লিংকে
শাবি উপাচার্য ফরিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
পুলিশের হামলার ঘটনায় বিস্ফোরণ ঘটলেও উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্য বিভক্তি তৈরি, ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান করতে বাধা প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লার লোকদের নিয়োগে প্রাধান্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এখন একটাই দাবি, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমদ লিজার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গত রোববার হামলা চালায় পুলিশ। তখন দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এরপর থেকেই এ আন্দোলনের দাবি হয়ে ওঠে উপাচার্যের পদত্যাগ। সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীদের সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীরাও তখন যুক্ত হন এই আন্দোলনে। এমনকি এর আগে ছাত্রীদের আন্দোলনে উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও এখন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে সরব।
পুলিশের হামলার ঘটনায় বিস্ফোরণ ঘটলেও উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি, ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান করতে বাধা প্রদান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লার লোকদের নিয়োগে প্রাধান্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে এসব অভিযোগের কথা জানা গেছে।
২০১৭ সালের আগস্টে প্রথম দফায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ জুন উপাচার্য পদে তাকে পুনর্নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের কোনো দাবিকে আমলে নেন না। তার একক সিদ্ধান্তে সবকিছু চলে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভবন তৈরি হচ্ছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আশু সমস্যা সমাধানে উপাচার্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।’
ঐ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে আমরা ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। এর অন্যতম ছিল প্রতিটি একাডেমিক ভবনে আলাদা রিডিং রুম করা। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা দাবি করেছিলাম সপ্তাহে সাত দিন পাঠাগার খোলা রাখার। সে দাবিও পূরণ হয়নি। এখন সপ্তাহে পাঁচ দিন পাঠাগার খোলা থাকে। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে। অথচ এই দুই দিন ক্লাস পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা পাঠাগারে এসে পড়তে পারত।’
প্রসঙ্গত, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমরা কালকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এই সময়ের মধ্যে উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে আমরা আমরণ অনশনে যাব।’ তারা আরও বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশনে চালিয়ে যাব।’
রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ না করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবির সঙ্গে সংহতি জানাতে অস্বীকৃতি জানানোয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফিরিয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতাদের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস এবং সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মস্তাবুর রহমান।
এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির সঙ্গে শিক্ষকরা যেন সংহতি জানান। কিন্তু শিক্ষক সমিতির নেতারা তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের ফিরিয়ে দেন।