

রাজশাহী প্রতিনিধি: শিশুটির বয়স তখন ছিলো ছয়বছর। বাসায় একদিন একা থাকার সুযোগে ধর্ষণের শিকার হয় প্রতিবেশি এক কিশোর কতৃক।
আকস্মিক এমন ঘটনায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলো শিশুটি। সেই ধকল কাটিয়ে উঠাতেই শিশুটিকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয় পরিবার। ভেবেছিলো সবার সাথে থাকলে মানসিক ভাবে শক্তি পাবে মেয়েটি । কিন্তু কে জানত সভ্য এই সমাজে একজন ধর্ষিত শিশুকেও অপরাধীর চোখে দেখে এই সমাজের তথাকথিত সভ্য নামধারী কিছু মানুষ!
রাজশাহী মহানগরীতে ধর্ষণের শিকার আট বছরের এক শিশুকে মাদ্রাসায় ভর্তির তিন দিন পর ভর্তি বাতিল করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়েছে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ।
এই ঘটনায় শিশুটির পরিবারকে কোন নোটিশ না দিয়েই ওই শিশুর ‘মানসিক অসুস্থতার’ অজুহাতে ভর্তি বাতিল করে তাকে মাদ্রাসা থেকে বিদায় করে দেবার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শিশুর অভিভাবকদের অভিযোগ, মাদ্রাসায় ভর্তির তিন দিন পর ওই শিশুকে মাদ্রাসার গেটের বাইরে বের করে গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়।আকস্মিক এই ঘটনায় হতবাক শিশুটি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা।
পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ভর্তি বাতিলের বিষয়টি সত্য বলে স্বীকার করে।
তবে এমন সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই শিশুর অভিভাবকের আচরণ খারাপ হওয়ায় তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনার পর শিশুটির মানসিক সমস্যা হয়েছে। তাকে তার পরিবার একজন মানসিক চিকিৎসক দেখাচ্ছে এমন অবস্থায় অন্য শিক্ষার্থীদের উপরে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়া হিসেবে চাকরি করেন শিশুর মা। রেলওয়ের বস্তিতে একটি ঘর করে বসবাস করেন।
২০২০ সালের ২১ মার্চ শিশুর মা ছিলেন হাসপাতালে। শিশুর বাবা অটোরিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। এই অবস্থায় শিশুটিকে কৌশলে বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে ধর্ষণ করে প্রতিবেশি এক কিশোর। ধারণ করা হয় ভিডিও। ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ ওই কিশোরকে আটক করে। এ ঘটনায় ওই বছরের ২২ মার্চ মামলা করা হয়। ওই মামলায় ওই কিশোর এখন কারাগারে।
শিশুটির মা বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে মেয়েটা পেটের নিচের দিকে ব্যথা অনুভব করে। দিনে দিনে শরীর খারাপ হচ্ছে। তার মানসিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এজন্য তাকে একজন মানসিক চিকিৎসককে দেখাচ্ছি।
১০ দিন আগে রাজশাহী মহানগরীর একটি মহিলা মাদ্রাসায় তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। বেসরকারি এই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ভর্তির তিন দিন পর তার মেয়েকে মাদ্রাসার গেটের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। তারপর গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েটা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে তখন কাঁদছিল। পরে মাদ্রাসার পরিচালক মেয়েকে দূরে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিতে বলেন।
জানতে চাইলে, মাদ্রাসার পরিচালক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, যেসব অভিভাবকের আচরণ খারাপ তাদের মাদ্রাসায় রাখি না। আসলে শিশুটির মা-বাবার আচরণ খারাপ। এমন কথা বলে যে মাদ্রাসার পরিবেশ নষ্ট হয়। এজন্য অন্যান্য অভিভাবক আপত্তি করেন। তাই শিশুটির ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি আমরা পরে শুনেছি।
মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, শিশুটির মায়ের দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন ডিএনএ টেস্ট করা হবে। তারপর অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
ডিএনএ টেস্ট না হওয়ায় অভিযোগপত্র দেওয়া যাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন ওই পুলিশ কমকর্তা।