

মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর প্রতিনিধি: ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর, ইতিহাস ঐতিহ্য সাংস্কৃতিতে ভরপুর। জ্ঞানী, গুণী, ধনীদের তীর্থভূমি খ্যাত চাঁদপুর জেলার প্রতিটি অংশে লেগে আছে ইতিহাস ঐতিহ্যের ছোঁয়া। এখনো এই জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে স্ব-গৌরবে দাঁড়িয়ে আছে তৎকালীন জমিদারদের বাড়ি। যে বাড়িগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানান দিচ্ছে জমিনদারের জমিদারিত্বের কথা।
তেমনই একটি স্থাপনা। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড কড়ৈতলী গ্রামে অবস্থিত কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি। এটি স্থানীয়দের কাছে ‘বাবুর বাড়ি’ নামেও পরিচিত।
উইকিপিডিয়ার তথ্য সূত্রে জানা যায়, প্রায় আটশতক আগে বরিশাল জেলার অধিবাসী বাংলা ১২২০ সালে হরিশ চন্দ্র বসু নামের একজন এই কড়ৈতলী জমিদার বাড়িটির গোড়াপত্তন হলেও, পরবর্তীতে দীর্ঘসময় ধরে তার উত্তরসূরীরা এখানকার জমিদারি করেন। ভারতবর্ষ ভাগের পর ইংরেজি ১৯৫১ সালে শেষ জমিদার গোবিন্দ বসুর হাত ধরেই এই জমিদার বাড়ির পতন ঘটে।
সেই থেকে আজ আব্দি পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে পড়ে আছে। বর্তমানে এই জমিদার বাড়ির সকল সম্পত্তি সরকারের আওতায়। স্থানীয়রা এর বেশ কিছু জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবহার করে। আর কিছু অংশ অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছে স্থানীয়রা। সাম্প্রতিক দখলদার আর কিছু লোভের বলি হয়ে ধংস হয়ে যাচ্ছে জেলার ঐতিহাসিক এই স্থাপনা। এতে হারিয়ে যেতে বসেছে এই জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমিদার বাড়ির মূল ভবনের সাথে অবস্থিত মন্দির ঘরের ভেতরে প্রায় ৪-৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে মন্দিরের দেওয়ালের এবং পিলারে পাশের মাটি সরে যাওয়া। যে কোন সময় মন্দির ঘরটি ধসে পড়তে যাওয়া আশংকা রয়েছে। শুধুমাত্র মন্দির নয়, পাশে থাকা বন্দীশালার বেশ কয়েকটি কক্ষের মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। এবং আরো কয়েকটি কক্ষের মাটি কাটার শুরু করা হয়েছে।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কারা এই সব মাটি কাটে নিয়েছে? আর আশেপাশে এত জায়গায় এত মাটি থাকা সত্বেও কেন রুমের ভিতরের মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে?
স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানিয়েছে, এখান থেকে মাটি কেটে রাস্তার বাঁধে দেওয়া হয়েছে। আর কেউ মাটি নিয়ে ঘর লেপার কাজ করছে। কিন্তু জমিদার বাড়ি পাশে দিয়ে যাওয়া রাস্তায় মাটি কেটে দেওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সমতল ভূমিতে রাস্তা হওয়ায়। এই রাস্তায় কোন মাটি দেওয়ায় তেমন প্রয়োজন নেই৷ তাছাড়া রহস্যজনক বিষয় হচ্ছে, আশেপাশে এত জায়গা থাকার পরও রুমের ভিতরে মাটি কেটে রাস্তায় দিতে হবে কেন? স্থানীয় বাসিন্দারা মিথ্যা যুক্তি দেখালেও এই মাটি কাটে নিয়ে যাওয়ার পিছনে রহস্য লুকিয়ে আছে।
অনেকের ধারণা, জমিদার বাড়ির রুমের মাটি কেটে একটি মহল গুপ্তধনের খোঁজ করছে। কথিত আছে জমিদার গোবিন্দ বাবু এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় প্রচুর ধনসম্পদ মাটিতে পুতে রেখেছেন। আর সেই গুপ্তধন খোঁজে পাওয়ার লোভেই মাটি কেটে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে যে কারনেই কক্ষে ভিতরের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হোক না কেন, এতে জমিদার বাড়ি ভবনগুলো যে কোন সময় ধসে পড়ে যেতে পারে। আর ভবনগুলো ধসে পড়লে জমিদার বাড়ি এই জায়গাগুলো দখল করে নিতে পারবে স্বার্থান্বেষী মহল। এটিকেও কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
তবে এই বিষয়ে কিছুই জানেন না স্থানীয় মেম্বার আলি হায়দার উজ্জল পাটওয়ারী। জানেন না পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত বিএসসিও।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি জানিয়েছেন, ‘এই ধরনের কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। এখন যেহেতু জেনেছি আমরা ব্যবস্থা নিবো।
ঐতিহাসিক এই স্থাপনা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমনটাই দাবি সমাজের সচেতন ও বিশিষ্টমহলের।