

নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসদরে ছিচকে চোর, মাদকসেবী আর মাদক বিক্রেতার কারণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। মাদকের অর্থের যোগান দিতে মাদকসেবীরা অপরাধে জড়ালেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নিরব। মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে ভীতি কাজ করছে।
বাসা-বাড়ি, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠের পর এবার পাঠাগারও নিস্তার পায়নি মাদকসেবীদের হাত থেকে। থানায় অভিযোগ দিয়েও মিলছে না সমাধান।
সর্বশেষ গত রবিবার (০৮ মে) দেবীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতি ও পাঠাগার থেকে প্রায় ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র চুরি হয়ে যায়। এর আগে গত মঙ্গলবার (০৩ মে) একই পাঠাগার থেকে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের বইসহ পাঠাগারের জানালার গ্রিল, কপাট, চেয়ার-টেবিলসহ সর্বমোট এক লাখ ৩৬ হাজার টাকা মূল্যের জিনিসপত্র চুরি যায়। এই বিষয়ে ওইদিনই থানায় অভিযোগ দেওয়ার ৫ দিন পর একই পাঠাগারে আবারো চুরি হয়। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাঠাগার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ।
গত কয়েক মাসের মধ্যে ঈদগাহ মাঠের গ্রিল, নির্মাণাধীন গম্বুজের লোহার তৈরি ফ্রেমসহ বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত পানির পাম্প, ওয়ারিংয়ের তার, বাল্ব, সাইকেল চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, মাস দুয়েক আগে চৌরস্তা মোড় থেকে আমার সাইকেল হারিয়ে গেলে থানায় যাই। এলাকাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকায় ভেবেছিলাম সহজেই চোর সনাক্ত করা যাবে। পরে নিজে বাইরে থেকে মনিটর সংগ্রহ করে থানায় এনেও শেষ পর্যন্ত সিসি ফুটেজ দেখতে পাইনি। পরে ফুটেজ দেখার জন্য এসপি অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। নিরপত্তা বেষ্টনীতে থেকেও আমরা নিরাপদ নই।
পৌরবাসীর অভিযোগ দেবীগঞ্জে বেশ কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর তথ্য পুলিশের কাছে থাকলেও তারা দেদারসে মাদক বিক্রি করে চলছে। আগে এলাকার মাদকসেবীরা মাদক ক্রয় করলেও এখন বাইরে থেকে অপরিচিতদের মাদক কিনতে আসতে দেখা যাচ্ছে।
দেবীগঞ্জ কলেজের সাবেক অধ্যাপক এবং দেবীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতি ও পাঠাগারের সহ সভাপতি নাসিরউদ্দিন চৌধুরী জানান, প্রথমবার বইসহ আসবাবপত্র চুরি যাওয়ায় আইনের আশ্রয় নেওয়ার কয়েকদিন পর যা অবশিষ্ট ছিল তার প্রায় সবই চুরি হয়ে গেছে। মাদকসেবীদের জন্যই চুরির উৎপাত বেড়েছে। আমরা শীঘ্রই মাদক ও চুরির বিরুদ্ধে সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে নাগরিক উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবো বলে পরিকল্পনা করেছি।
দেবীগঞ্জ পৌর মেয়র আবু বকর সিদ্দীক বলেন, আজ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দল মাদক ও চুরিসহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে আমার সাথে দেখা করেছেন। আমরা আগামী বৃহস্পতিবার উপজেলা হল রুমে সুধী সমাজের অংশগ্রহণে পুলিশ-প্রশাসনের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব বলে ঠিক করেছি। আশা করছি সমন্বিত উদ্যোগ নিলে মাদক ও চুরি নির্মূল করা যাবে।
দেবীগঞ্জ থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) জামাল হোসেন ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
থানার সেকেন্ড অফিসার রাশীদুল আলম চৌধুরী জানান, পাঠাগারে চুরির বিষয়টি নিয়ে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।