

সময়ের কন্ঠস্বর, ঢাকা: মাত্র ছয় মাস আগে প্রেম করে ইমাকে আড়াই বছরের বাচ্চাসহ বিয়ে করেন আজাহারুল ইসলাম (২৭)। প্রথম কিছুদিন বাচ্চাকে আদর যত্ন করলেও তারপর থেকে সহ্য করতে পারতেন না তিনি ।
শিশুটির সাথে মায়ের উপস্থিতেও শুরু হয় নানারকম ধমক ও অত্যাচার। এ নিয়ে অবশ্য আগে থেকেই শংকিত ছিলেন মা, তবে এতবড় নৃশংসতা হবে তা ভাবেনি কল্পনাতেও।
ঘটনার দিন তিন বছরের শিশু নামিরা ফারিজকে খাওয়াচ্ছিলেন তার সৎ বাবা । মা এসময় অফিশিয়াল কাজে বাইরে ছিলেন। খাওয়ার সময় নামিরা কান্না করায় প্রথমে থাপ্পড় ও পরে কিডনির পাশের চেপে ধরে গুরুতর আহত করেন। পরে নামিরার মা তাসলিম জাহান ইমা খবর পেয়ে নামিরাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
এই আঘাতের ফলেই মৃত্যু হয় অবোধ শিশুটির! চাঞ্চল্যকর হত্যার এই রহস্য উদ্ধার হয়েছে শিশুটিকে হত্যাকারী সৎ পিতার স্বীকারোক্তিতে।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানান চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন আজহার। স্ত্রীকেও হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখান।
ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণখানের আশকোনা একাডেমির গলির হেলাল উদ্দিনের ভাড়া বাড়িতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২০৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে শিশুটি মারা যায়।
নিহত ওই শিশু মুন্সিগঞ্জ টঙ্গিবাড়ী উত্তর বেতকা এলাকার আজাহারুল ইসলাম ও নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জের তাসলিমা জাহান ইমার মেয়ে। আজহারুল নামিরার সৎ বাবা। আজহারুল রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে শেফ হিসেবে কাজ করেন।
দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজিয়া খাতুন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘শিশুটি মারা যাওয়ার পর তার বাবা-মা দুজনই থানায় এসে পুলিশকে বলে, তাদের শিশু বৃহস্পতিবার ডাইনিং টেবিলে বসে খেলছিল। সেসময় পরে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তখন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই দিবাগত রাত ২টার দিকে মারা যায়।
এর পর খবর পেয়ে পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সুরতহাল করার জন্য যাই। সুরতহাল করতে গিয়ে শিশুটির বাম চোখের পাতা ও ভ্রুতে কালচে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। ভালো করে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় কোমরের বাম পাশে কিডনির জায়গাতেও কালচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ সূত্র ধরেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য বেরিয়ে আসে।’
এসআই রেজিয়া খাতুন আরও বলেন, ‘শিশুটির মা বৃহস্পতিবার সকালে আইইএলটিএস পরীক্ষা দিতে উত্তরা চলে যান। পরে বেলা ১১টার দিকে শিশুটিকে তার সৎ বাবা আজহার খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। সেসময় শিশুটি কান্না করায় সৎ বাবা শিশুটিকে প্রথমে দুই গালে থাপ্পড় মারে। এতে শিশুটি খাটের ওপর পড়ে গিয়ে চোখের পাশে আঘাত পেয়ে জোরে চিৎকার শুরু করে। শিশুটি চিৎকার করায় আজহার তখন শিশুটির কোমরের বাম পাশের কিডনির কাছে চেপে ধরে।
পরে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে অফিসে চলে যায়। সম্পূর্ণ বিষয়টি দেখে ফেলে গৃহপরিচারিকা ঋতু। দুপুরের পরে শিশুটির মুখ দিয়ে রক্ত বের হলে তার মা ইমাকে ফোন দেন ঋতু। কিন্তু ইমা পরীক্ষার হলে থাকায় শেষ করে বিকেল ৪টার দিকে কাজের বুয়াকে কল দেন। তখন বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত ইমা দ্রুত বাসায় এসে তাঁর মেয়েকে প্রথমে উত্তরার দুটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান।
কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার ঢামেক হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।’
এসআই রেজিয়া খাতুন আরও বলেন, ‘শিশুটি মারা যাওয়ার পর পরই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কাজের মেয়েকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয় আজহার। অপরদিকে ইমাকেও ভয়ভীতি হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করেন। ভয়ে ইমাও প্রথমে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গোপন করেন। পরে তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসলে ইমাও বিস্তারিত বলেন।’
এসআই রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘শিশুটিকে হত্যার ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে শুক্রবার বাদী হয়ে আজহারের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় শিশুটির সৎ বাবাকে দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
শিশুটির মা ইমা গনমাধ্যমকে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে থেকেই নানা বাহানায় আমার বাচ্চাকে নির্যাতন করত আজহার। তখন তাঁকে আমি বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছি চলে যাব। কিন্তু চলে না যাওয়ায় কিংবা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমার মেয়েকে হারাতে হলো। আমি আমার মেয়েকে হত্যার বিচার চাই। আজহারের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি।’