শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দুদুয়ার খালে পানি না থাকায় সেচ সংকটে পড়েছে ৩০০ একর বোরো আবাদ। গত এক সপ্তাহে খেতে সেচ দিতে না পারায় অধিকাংশ আবাদ শুকিয়ে গেছে। এ নিয়ে রুপাকুড়া ও মানুপাড়া গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষক আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাঁরা বিএডিসির মাধ্যমে দুদুয়ারখালে সপ্তাহে দুই দিন পানি দেওয়ার দাবী জানান।
স্থানীয় একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানি দুদুয়ার খালে নেমে আসে। এই খালটি রুপাকুড়া ও মানুপাড়া হয়ে দক্ষিণ দিকে বইয়ে গেছে। বোরো মৌসুমে এই খালের পানি দিয়ে দুই গ্রামের প্রায় তিনশতাধিক কৃষক প্রায় ৫০০ একর জমিতে বোরো আবাদ করে থাকেন। এক মাস আগে রুপাকুড়া ও মানুপাড়া গ্রামের শতাধিক কৃষক দুদুয়ারখালে মাটির বাঁধ দিয়ে পানি মজুত করেন। ১৫ দিন আগে সেই পানি দিয়ে রুপাকুড়া গ্রামে ২০০ একর ও মানুপাড়ায় ১০০ একর জমিতে বোরো চাষ করা হয়। কিন্ত দুদুয়ার খালে এক সপ্তাহ ধরে পানি না থাকায় খেতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ক্ষেতে ছোট ছোট ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। সেচ সংকটের কারণে স্থানীয় কৃষকরা আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
তাঁরা ফসল রক্ষায় দুদুয়ার খালের পাশে বিএডিসির সেচপাম্পের মাধ্যমে সপ্তাহে ১/২ দিন খালে পানি দেওয়ার দাবি জানান। তা না হলে রুপাকুড়া ও মানুপাড়া গ্রামের শতাধিক কৃষকের ৩০০ একর বোরো আবাদ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। তাঁরা বিএডিসি ও কৃষি কার্যালয়ের সমন্বয়ে দ্রুত সেচ সংকট নিরসনের জন্য পদক্ষেপে নেওয়ার অনুরোধ করেন।
আজ মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রুপাকুড়া ও মানুপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুদুয়ারখালটি পানি না থাকায় শুকিয়ে রয়েছে। তার দুই পাশে কৃষক জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। কিন্ত খেতে পানি না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেতে ছোট ছোট ফাটল দেখা দিয়েছে। এসময় কৃষকরা সেচ সংকটের কারণে ফেটে যাওয়া আবাদ দেখিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেন।
মানুপাড়া গ্রামের কৃষক মোস্তফা আলী (৫৩) বলেন, খালের পানিতে ১৫ হাজার টাকা কইরা একর প্রতি বর্গা নিইয়া তিন একর জমিতে ৯০ হাজার টাকা খরচ কইরা বোরো চাষ করছি। কিন্ত এক সপ্তাহ ধইরা খালে পানি নাই। ক্ষেতেও সেচ দিবার পাইতাছি না। ক্ষেতে ফাটল ধরছে যদি দুই একরে মধ্যে পানি দিবার না পাই তাইলে ফসল মইরা যাইবো। অহন বিএডিসির সেচ দিয়া যদি খালে পানি দেওন যাইতো তাইলে আবাদ লইয়া শতাধিক কৃষক বাঁচবার পাইতো।
রুপাকুড়া গ্রামের কৃষক মাসুম মিয়া (৪৮) বলেন, বোরো আবাদ লইয়া আমরা মহা বিপদে পড়ছি। খালে পানি নাই তাই ক্ষেতে সেচ দিবার পাইতাছি না। খালের কাছেই বিএডিসির সেচপাম্প আছে। কৃষকগর কথা চিন্তা কইরা যদি সপ্তাহে এক বা দুই দিন খালে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করা অইতো। তাইলে তিনশ একর বোরো আবাদ রক্ষা করা যাইতো।
নয়াবিল গ্রামের জুলহাস উদ্দিন (৫৫) বলেন, ঋণধার কইরা ১৫ কাঠা (শতক) জমিতে বোরো লাগাইছি। বাকি ২০ কাঠা জমি ভিজাইছি। ভাবছিলাম চাষ করমু। কিন্ত খালে পানি না থাকায় আবাদের ক্ষেত শুকাইয়া গেছে। বাকি ২০ কাঠা কেমনে লাগাইমু। সরকার যদি পানি ব্যবস্থা না করে তাইলে কৃষকগরে আবাদ করার কোন উপায় থাকবেনা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ কর্মকর্তা মো.আনোয়ার হোসেন বলেন, সেচ সংকটের জন্য আবাদ ব্যহত হচ্ছে বিষয়টি কেও আমাদের জানাইনি। সেচ সংকট নিরসনে দ্রুত সেচ কমিটির সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফসল রক্ষায় সেচ দিতে প্রয়োজনে বিকল্প ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, সেচ সংকটের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি৷ সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷
আরআই