তিস্তা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের দারিদ্রপীড়িত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির একমাত্র ভরসা কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নত চিকিৎসার মূল্যবান যন্ত্রপাতি কেনা হলেও টেকনোলজিস্টদের অভাবে অযন্ত্র আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার মালামাল।
জরুরী প্রয়োজনে রোগীকে নিয়ে স্বজনদের ছুটতে হচ্ছে কাউনিয়া থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রংপুর জেলা শহরে। সেখানে গিয়ে বেশি টাকায় করতে হচ্ছে এক্স-রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত মানুষের মনে বাড়ছে ক্ষোভ, হচ্ছেন অসন্তোষ।
জানা গেছে, ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম। একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় অত্যাধুনিক মানের এক্স-রে যন্ত্র চালু করা সম্ভব হয়নি। ডেন্টাল সার্জন বদলি হওয়ায় দন্ত বিভাগটিও বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের স্বাব্দী গ্রামের নুরু মিয়া জানান, হাসপাতালে তার স্ত্রী বুক ও পেটের ব্যথায় ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসক দুটি পরীক্ষার কথা বলেছিলেন কিন্তু সেখানকার এক্স-রে যন্ত্রটি অচল অবস্থায় পড়ে থাকাতে তাকে বাইরে থেকে এক্স-রে এবং আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হয়। আর এতে তাকে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি গুণতে হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রথম এক্স-রে যন্ত্রটি স্থাপনের বছর খানেকের মাথায় নষ্ট হয়ে যায়। এরপর বেশ কয়েক বার ভাল করার চেষ্টা করা হলেও কিছু দিন চালু থাকার পর আবার নষ্ট হয়ে যায়। এরপর যন্ত্রটি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার চিঠি দিয়েও কোন কাজ হয়নি। ৭ বছর আগে আরেকটি আধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রদান করা হয়, যা টেকনোলজিস্ট বা অপারেটরের অভাবে আজও চালু করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর হোসেন জানান, শুধু এক্স-রে যন্ত্র ২টি নয়, দীর্ঘদিন ধরে ইসিজি যন্ত্র, রক্ত সংরক্ষণের রেফ্রিজেরেটর, ডিস্টিলওয়াটার তৈরীর যন্ত্রটিও চালু করা যায় নি। হাসপাতালের নানাবিধ সমস্যার ব্যপারে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপির চেষ্টার ফলে অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা কেটে গেছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা আগের তুলনায় বেশ উন্নত। চিকিৎসক ও নার্স সংকট না থাকলেও টেকনোলজিস্ট সংকট রয়েছে। এক্স-রে যন্ত্র থাকলেও টেকনোলজিস্ট না থাকায় তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা তারিন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর নানা সমস্যার কথা জেনেছি। মন্ত্রী মহোদয় ও জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় সমাধানের জন্য এসব বিষয় তুলে ধরব।
উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যগুলো সমাধানের জন্য মন্ত্রী মহোদয়কে জানানো হবে। আর আমাদের পরিষদ থেকে যতটুকো করা যায়, সেটি আমরা করতে চেষ্টা করব।
এআই