কক্সবাজার সদরের বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গরু চোরেরা। তাদের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ। প্রতিরাতেই কোনো না কোনো এলাকায় হানা দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। গত কয়েক মাসে এ উপজেলায় প্রায় শতাধিক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রাতেও ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া কোনার পাড়া গ্রাম থেকে ৩টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। ছৈয়দ আলম কন্ট্রাক্টর নামে এক আ.লীগ নেতার বাড়ি থেকে ২টি গরু চুরি হয়েছে। একই রাতে একই এলাকার জসিম উদ্দিনের ১টি গরু নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরেরা। দুইদিন আগে খরুলিয়া নয়াপাড়া এলাকা থেকে ৩টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় বলেও জানা গেছে।
গরুর মালিক ছৈয়দ আলম কন্ট্রাক্টর বলেন, অন্য দিনের মতো গরুগুলোকে গোয়ালঘরে রেখে আমি বাড়িতে ঘুমাতে যাই। রাত সাড়ে ৪টার সময় ঘরের আশেপাশে মানুষের আনাগোনা টের পেয়ে সন্দেহবশতঃ আমি ও আমার স্ত্রী গোয়াল ঘরে যাই। গিয়ে দেখি আমার গরুগুলো নেই।
পুলিশের নজরদারির অভাব আর রাত্রিকালীন টহল না থাকার কারণে চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। তাদের মতে, সংঘবদ্ধ চোরের দল নানা কৌশলে একের পর এক চুরি করে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক গরু চুরির ঘটনা ঘটলেও অতীতে কোনো গরু উদ্ধার না হওয়াসহ পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে আইনি পদক্ষেপ নিতে তেমন আগ্রহ নেই ক্ষতিগ্রস্ত গরু মালিকদের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দু রশিদ বলেন, প্রায় প্রতি রাতেই গোয়াল ঘর থেকে চোরের দল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দরিদ্র কৃষকের সহায় সম্বল। যাদের গরু আছে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ঝিলংজার ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রতিদিনের মতো গোয়ালঘরে গরুগুলো রেখে তালাবদ্ধ করে ঘুমিয়ে যান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন। গভীর রাতে চোরেরা গোয়ালঘরের তালাভেঙে গরুগুলো নিয়ে যায়। চুরি হওয়া গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩ লাখ টাকা। ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোয়ালঘরে গরু দেখতে না পেয়ে তারা চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হন।
তিনি আরোও বলেন, গত বছর আমার নিজস্ব ১০ লাখ টাকার পাঁচটা গরু নিয়ে গেছে। এজন্যে আমি গরু পালাই বন্ধ করে দিয়েছি। বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জেনেছি, নিরীহ যে লোকগুলো বাৎসরিকভাবে গরু পালে এরাও গরু পালা বন্ধ করে দিয়েছে শুধু চুরের উপদ্রবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ জমানো সঞ্চয়, ধার-দেনা কিংবা ঋণ নিয়ে গরু কিনে তা লালন পালন করে থাকেন। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনতে তারা অনেক কষ্ট করে থাকেন। গরুর দুধ বিক্রি করে পরিবারের খরচের টাকা যোগান। কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো গরু দিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আর গরু চোরেরা যখন এসব মূল্যবান গরু চুরি করে নিয়ে যায় তখন হতদরিদ্র এসব পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় যেসব সড়কে আলো থাকে না কিংবা অনেকটা নির্জন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশি উন্নত বিশেষ করে সেসব এলাকায় চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে।
ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, গরুর ঘর থেকে রশি কেটে অথবা খুলে গরু গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তবে এসব ঘটনায় গরু চোরদের গ্রেফতার করতে না পারায় একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। গরুচুরি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, আমি এই থানায় যোগদানের পর থেকে গরু চুরি রোধে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। আজ রাতে গরু চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় নি।
তিনি বলেন, গরু চুরি হলে বা যেকোনো ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাদের আহ্বান জানাই। তারা আসুক, আমাদের অভিযোগ দেক। আমরা আইনি ব্যবস্থা নিবো।