নোয়াখালীতে গত ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে গত ২৪ ঘন্টায় ২৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের টানা ভারী বর্ষণে ডুবেছে নোয়াখালী জেলা শহর ও জেলার অধিকাংশ উপজেলা শহর। এতে জেলার শহরাঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। মানব সৃষ্ট বন্যায় পরিস্থিতি এমন যেন মাছ চাষের উপযোগী খন্ড খন্ড খামার। ডুবে গেছে পাড়া মহল্লার অলি গলি ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, রেললাইনসহ ডুবেছে হাট-বাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ভেসে গেছে মাছের খামার গুলো, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। বাদ যায়নি সরকারি অফিস সমূহ। জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছে পথচারী কর্মব্যস্ত মানুষ।
শুক্রবার (২ আগস্ট) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর নোয়াখালী কার্যালয় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টানা বৃষ্টিতে ২৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলমান সপ্তাহ জুড়ে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট জলবদ্ধতায় জীবিকার তাগিদে বের হওয়া শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে।
সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন স্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস সমূহ ঘুরে দেখা যায়, পানিতে ডুবে গেছে শিল্পকলা একাডেমীর সড়ক, মাইজদী কোর্ট রেলস্টেশন সংলগ্ন রেললাইন, নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সড়ক, নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ সড়ক, বসিরার দোকান ইমামবাজার সড়ক, মাস্টারপাড়া সড়ক, পাঁচ রাস্তার মোড় সড়ক, এম এ রশিদ উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, আল-ফারুক একাডেমী স্কুল সড়ক, হাউজিং আবাসিক এলাকা সড়ক, হরিনারায়নপুর সংযোগ সড়কসহ ডুবুডুবু অবস্থায় আছে নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশ।
জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়, ডুবে গেছে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা সিভিল সার্জন বাসভবনের সড়ক। এছাড়া পানিতে ডুবে গেছে জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি অফিস সমূহ। সহসাই পানি না নামলে অফিস কক্ষে পানি ঢুকে যাওয়ায় কারণে বিঘ্নিত হতে পারে সেবা কার্যক্রম।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে রাস্তায় বের হওয়া খেটে খাওয়া মানুষ, বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটু পরিমাণ পানি ডিঙিয়ে অনেক মানুষকে দেখা গেছে পথ চলতে। যাত্রীদের বহন করা সিএনজি অটো যানবাহন গুলো পানিতে ডুবে ইঞ্জিন বিকল হতে দেখা গেছে।
মাইজদী শহরের অটো চালক আলমগীর হোসেন জানায়, সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরেছি প্রায় সকল রাস্তাতেই পানি উঠে গেছে। আমরা ঝুঁকি নিয়ে দুর্ভোগে পড়া মানুষদের সুবিধার্থে অটো চালাচ্ছি। কিন্তু পানিতে ডুবে আমাদের অনেকের গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে।
শহরের লক্ষ্মীনারায়নপুরে বসবাসকারী বাসিন্দা আরমান হোসেন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও ড্রেন সংস্কার করে কোন লাভ নেই এতে করে জলাবদ্ধতা যেমন হয় তেমনি সরকারি অর্থেরও অপচয় হয়। শেষ ফলাফল এসব ড্রেন পানি নিষ্কাশনে কোন কাজেই আসে না। কোন ইঞ্জিনিয়ার এসব ড্রেনের প্ল্যানিং তৈরি করে মাথায় আসে না। বেশিরভাগ ড্রেন ও নালা অকেজো হয়ে রয়েছে।
আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে আমার অফিস ও সড়ক ডুবেছে। আমিও জলাবদ্ধতায় আটকে আছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী। সাথে সাথে নোয়াখালী খালও খনন করা হয়েছে। যেটা নোয়াখালীর দুঃখ ছিল। তবে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে নোয়াখালীর শহরাঞ্চল ডুবে যাওয়ার পর এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সকল শ্রেণীর পেশার নাগরিকদের নিয়ে বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে "জলাবদ্ধতা নিরশনে করণীয়" শীর্ষক মতবিনিময় সভা ডেকেছেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
পিএম