দেশের নিরাপত্তা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর কোনও দেশের নিরাপত্তার কথা উঠলেই সাধারণত দুটি ছবি আসে। প্রথম সেনাবাহিনী এবং দ্বিতীয় পুলিশ। একটি গোটা দেশ তথা দেশবাসীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। পুলিশের দায়িত্ব দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার রক্ষা করা এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্ব বাইরের শত্রুর হাত থেকে দেশ, দেশবাসীতে নিরাপদ রাখা। তাই প্রতিটি দেশে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু যদি বলি যে পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যাদের কোনও পুলিশবাহিনী নেই। নেই কোনও জেল।
তাহলে চলুন সীমান্তে পুলিশবিহীন দেশগুলি সম্পর্কে একটু খোঁজ নেওয়া যাক।
কোস্টারিকা: সামরিক বাহিনী নেই এমন প্রথম দেশ হলো কোস্টারিকা। ৫ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দা থাকা, দেশের একমাত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হল জাতীয় পুলিশ যা সামরিক-গ্রেডের অস্ত্রে সজ্জিত। ১৯৪৯ সালে, কোস্টারিকা তার সামরিক বাহিনী বন্ধ করার সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে, দেশটি পারস্পরিক সহায়তার আন্তঃআমেরিকান চুক্তির সদস্য। সুতরাং বহিরাগত আগ্রাসনের সম্মুখীন হলে কোস্টারিকার প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দায়ী থাকবে।
ভ্যাটিকান সিটি: পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র হলো ভ্যাটিকান সিটি। ইতালির রাজধানী রোমের একটি অংশ। অতীতে নিরাপত্তার জন্য এখানে বাহিনী থাকলেও ১৯৭০ সালে সব বাহিনী বাতিল করে দেন। ভ্যাটিকানের সশস্ত্র বাহিনী, যার নাম প্যালাটাইন গার্ড এবং নোবেল গার্ড ভেঙে দেন পোপ পল ষষ্ঠ। এরপর ভ্যাটিকান সিটির নিরপেক্ষতা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে ইতালি।
পানামা: দেশে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে, নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে পানামানিয়ান পাবলিক ফোর্সের প্রায় ২৭ হাজার সদস্য রয়েছে। যদিও এটিতে সশস্ত্র বাহিনী নেই, তবে পানামানিয়ান ন্যাশনাল পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী এবং মাদকবিরোধী ইউনিটের পাশাপাশি দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং সামুদ্রিক অভিযানের জন্য বিশেষ বাহিনী দিয়ে সজ্জিত। পানামা সংবিধান সংশোধনের পর ১৯৯৪ সালে তার সামরিক বাহিনীকে ভেঙে দেয়।
নউরু: এমন আরও একটি দেশের নাম হলো নউরু। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপ রাষ্ট্রে মাত্র ১০ হাজার লোকের বসবাস। এটি মাইক্রোনেশিয়ার অংশ। এই দেশের কোনো পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী নেই।
পালাউ: পালাউ হলো এমন একটি দেশে যার কোনো সেনাবাহিনী নেই। তবে রয়েছে অনুমতিপ্রাপ্ত পুলিশবাহিনী। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় রয়েছে ৩০ জনের মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স ইউনিট। পালাউকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
আইসল্যান্ড: সশস্ত্র বাহিনীবিহীন আরেকটি দেশ আইসল্যান্ড। যদিও দেশে নিয়মিত সামরিক বাহিনী নেই, তবে এর প্রাথমিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইসল্যান্ডিক ন্যাশনাল পুলিশ, আইসল্যান্ডিক কোস্ট গার্ড এবং নয়টি আঞ্চলিক পুলিশ বাহিনী। তবে আইসল্যান্ডও একটি ন্যাটো সদস্য, যা তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। ন্যাটো সদস্য দেশগুলো আইসল্যান্ডের এয়ার পুলিশিং-এর অধীনে ঘূর্ণায়মান ভিত্তিতে আইসল্যান্ডের আকাশসীমা রক্ষা করে।
সলোমন: ৭ লাখের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে সলোমন দ্বীপপুঞ্জে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনী কোনোটিই নেই এদেশের। রয়্যাল সলোমন আইল্যান্ডস পুলিশ ফোর্স দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। দেশটির পুলিশ বাহিনী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তবে চীন এবং অস্ট্রেলিয়া গত কয়েক বছরে সামুদ্রিক টহল অভিযানে সহায়তা করার জন্য সলোমন দ্বীপপুঞ্জে টহল বোট সরবরাহ করেছে।