শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খানের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মতিউর রহমান সাগর সোমবার (৬ অক্টোবর) ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগকারী আলহাজ্ব মতিউর রহমান সাগর নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার ইউনিয়নের লাউলানী গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ঢাকার নয়াপল্টনে অবস্থিত ‘সাগর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’-এর মালিকসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খান নড়িয়ায় যোগদানের কিছুদিন পরই মতিউর রহমান সাগর ঘড়িসার ইউনিয়নের নোয়াদ্দা বাংলাবাজার এলাকায় যথাযথ নিয়ম মেনে একটি ওয়াসব্লক নির্মাণ করেন। পরে বিল উত্তোলনের সময় ইউএনও অফিস খরচের কথা বলে ৮ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করেন।
কিন্তু মতিউর রহমান এ অনৈতিক দাবিতে রাজি না হওয়ায় ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বিভিন্ন আইনি ভয়ভীতি দেখান এবং হুমকি দেন যে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরপর ২০ আগস্ট ২০২৫ তারিখে মতিউর রহমান বিদেশে অবস্থানকালে তার কর্মচারী বিল্লাল হোসেন ওএমএস চাল বিতরণ করেন। এ সময় ইউএনও চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করেন।
২৩ আগস্ট দেশে ফিরে মতিউর রহমান লিখিতভাবে জবাব দিলেও ইউএনও তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
ভুক্তভোগী এতে অনিহা প্রকাশ করলে ইউএনও ফৌজদারি মামলার হুমকি দেন এবং ২৮ আগস্ট উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে দিয়ে মতিউরের হোয়াটসঅ্যাপে একটি চিঠি পাঠান, যাতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ায় মতিউর রহমান সম্মানের খাতিরে ২ লাখ টাকা নগদ খামে ভরে ইউএনওকে প্রদান করেন। তবে ইউএনও তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে বাকি ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে দর কষাকষির একপর্যায়ে ইউএনও আরও ১ লাখ টাকা দাবি করেন।
মতিউর রহমান এ টাকা না দেওয়ায় ১১ দিন পর ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খান তার নেতৃত্বে ৭/৮ জন কর্মকর্তা নিয়ে মতিউরের গুদামে হানা দেন। সেখানে ৩৫৫ কেজি চাল কম থাকার অজুহাতে ৪১ হাজার ৪০৬ টাকা জরিমানা করেন এবং তার খাদ্যবান্ধব ডিলার লাইসেন্স স্থগিত করে দেন।
এ ছাড়া নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বপন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, তার একটি জমি নিয়ে বিরোধ সমাধানের কথা বলে ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খান তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ঘড়িসার ইউনিয়নের যুবদলে নেতা আকাশ হাওলাদার জানান, চরমহান এলাকায় একটি অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার সংবাদ ইউএনওকে জানালে পরে তিনি ঘটনাস্থলে এসে এক লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে দিয়ে যান। এছাড়াও ঘড়িসার বাজারের পুকুরপাড়ের খাস জমিতে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ঘর তোলার সুযোগ করে দিয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এগুলো কে বা কারা অভিযোগ করছে আমি তা অবগত নই, আমাকে নির্দিষ্ট করে জানালে তখন আমি এ বিষয়ে বক্তব্য দেব।'
এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, 'আমি এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না।'
এই ঘটনাকে ঘিরে নড়িয়া উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল ও সাধারণ মানুষ ইউএনওর এমন আচরণের নিন্দা জানিয়ে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
বিপ্লব হাসান হৃদয় /এনআই