চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এনিয়ে বরাবরই তিনি আশা প্রকাশ করলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, নরওয়ের নোবেল কমিটি অন্য পথেই হাঁটছে।
আগামী শুক্রবার (১০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) অসলোতে ঘোষিত হবে এবারের শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংস্থা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের নাম সেই তালিকায় থাকলেও পুরস্কার পাওয়া তার জন্য কঠিন হবে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি অন্তত আটটি যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছেন এবং সেজন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার অধিকার রাখেন। তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিশ্লেষকদের মধ্যে।
সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক পিটার ভ্যালেনস্টিন বলেন, ‘না, ট্রাম্প এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন না।হয়তো ভবিষ্যতে তাঁর কিছু পদক্ষেপ মূল্যায়নের আওতায় আসবে, তবে এ বছর নয়।’
অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার আরও স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের যেসব নীতি ও কার্যক্রম আমরা দেখেছি, তার অনেকটাই নোবেল পুরস্কারের মূল দর্শনের সঙ্গে যায় না। বিশেষ করে নিরস্ত্রীকরণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও জাতিগোষ্ঠীর ভ্রাতৃত্ব—এই মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর অবস্থান অসঙ্গত।’
গ্রেগার আরও বলেন, ‘ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন, ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি দিয়েছেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও সেনা মোতায়েন করেছেন রাজনৈতিক বিরোধ মোকাবিলায়। এসব বিষয় শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিপন্থী।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর নোবেল কমিটি হয়তো মানবাধিকার, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, নারী অধিকার ও সংকটে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর কাজ—এসব ক্ষেত্রেই মনোনিবেশ করবে।
আলোচনায় আছেন যারা:
সুদানের ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস: যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষকবলিত এলাকায় সাহসিকতার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ইউলিয়া নাভালনায়া: রুশ বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির মৃত্যুর পর স্বামীর আদর্শ ধরে রেখে মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
ইউএনএইচসিআর ও ইউএনআরডব্লিউএ: শরণার্থী ও ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সহায়তায় নিরলস কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে): যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স ও সিপিজে: সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেছেন, ‘আমরা কোনো প্রার্থীর একটি কাজ দেখে নয়, সামগ্রিক ভূমিকা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিই। শান্তির জন্য সত্যিকারের অর্জনটাই আমাদের প্রধান বিবেচ্য।’
সূত্র: এএফপি