জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ, একাকীত্ব ও হতাশা থেকে মুক্তি দিতে ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি রফিক ভবনের নিচতলায় চালু করা হয় মানসিক কাউন্সেলিং সেন্টার। উদ্দেশ্য ছিল আত্মহত্যা প্রবণতা রোধ, বিষণ্ণতা দূরীকরণ এবং পরীক্ষা-ভীতি মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান। কিন্তু প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেই সেবার বাস্তব চিত্র ভিন্ন দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় এখানে। তবে অনেক শিক্ষার্থী এখনো জানেন না, এমন একটি সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। অভিযোগ উঠেছে সহায়তা পেতে সময়ক্ষেপণ, সেবায় অদক্ষতা এবং অস্বস্তি পরিবেশের।
কাউন্সেলিং সেন্টারের তথ্যমতে, গত চার বছরে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী সেবা নিয়েছেন; মাসে গড়ে ৩৫ জন। বিশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর তুলনায় এই সংখ্যা অত্যন্ত কম বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সপ্তমী কর্মকার বলেন, 'আমাকে প্রায় দুই-তিন মাস পর ডাকা হয়েছিল। যারা কাউন্সেলিং দেন, তারা বিশেষজ্ঞ নন; মূলত মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের পরামর্শ অনেক সময় খুবই সাধারণ হয়।'
নাম প্রকাশ না করা এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা কাউন্সেলিং নিতে যাই, কিন্তু সেন্টারে গিয়ে দেখি কেউ নেই বা তারা ব্যস্ত। কথা বলতেই বলা হয় সময় শেষ। বরং আরও হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।'
আরেক শিক্ষার্থী সুহাইল আহমেদ বলেন, 'আমি জানতামই না বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক কাউন্সেলিং সেন্টার আছে। এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম। শুনেছি এখানে কার্যক্রম ঠিক মতো চলে না, বিষয়টা সত্যিই দুঃখজনক।'
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমিত লোকবল ও পেশাদার কাউন্সেলরের অভাবেই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অফিস সহকারী রেশমা রহমান বলেন, 'লোকবল সংকটের কারণে অনেক সময় কাউন্সেলিং বিলম্বিত হয়। যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা থাকার কারণে জটিলতা তৈরি হয়।'
কাউন্সেলিং সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফারজানা আহমেদ বলেন, 'আমাদের এখানে স্থায়ী পদ নেই। ইউজিসি থেকে নির্দিষ্ট বরাদ্দও নেই। পেশাদার কাউন্সেলর নিয়োগ জরুরি। আপাতত মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে।'
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, 'প্রতিটি বিভাগে দুজন করে শিক্ষক কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে আছেন এবং মেডিকেল সেন্টারে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে।'
ফাহিম হাসনাত/এসআর