ময়মনসিংহের নান্দাইলে ঐতিহ্যবাহী দেওয়ানগঞ্জ বাজারে বসেছে খড়ের হাট। প্রতিদিন এই বাজার থেকে খড় কিনছেন গৃহস্থরা। চাহিদা বেশি থাকায় আগের তুলনায় খড়ের দামও বেড়ে গেছে। বেড়েছে খড়ের কদর।
আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই তিন মাস চলে খড় বিক্রি। হাতের কাছেই গো-খাদ্যের বাজার বসায় খুশি ক্রেতারাও। প্রতি আটি খড় বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ৩শ টাকা দরে। গৃহস্থের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রেতারা খড় বিক্রি করছেন।
স্থানীয়রা এই বাজারকে কৃষকের খড়ের হাট বলে ডাকেন। গরুর খামারি, গৃহস্থ আসেন গরুর খাদ্য খড় ক্রয় করতে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসছেন হাটে। বিক্রি হচ্ছে ভালো। ভিড় করছেন ক্রেতা। দাম বেশি পেয়ে খুশি খড় বিক্রেতা। খড় বিক্রি করে লাভবান তারা।
রবিবার (১২ অক্টোবর) বিকালে সরেজমিন দেখা গেছে, স্থানীয় দেওয়ানগঞ্জ বাজারে বিক্রি হচ্ছে খড়। মধ্যবাজারে বিশাল জায়গাজুড়ে খড়ের সারি সারি ছোট-বড় স্তুপ। খড় কিনতে ভিড় করছেন গৃহস্থরা। মঙ্গলবার ও শুক্রবার বাদে প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে খড় বেচাকেনা। কৃষক তাদের চাহিদা অনুযায়ী কিনছেন খড়। চাহিদা বেশি থাকায় আগের তুলনায় খড়ের দামও বেড়ে গেছে।
খড়ের (গো-খাদ্য) দাম বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। গরু নিয়ে কৃষক পড়েছেন বিপাকে। প্রতিদিন খড় ক্রয় করতে ট্রলি ও ভ্যান নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন কৃষক। তারা খড় ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার খারুয়া, মহেষকুড়া, নরেন্দ্রপুর, হাটশিরা, কুর্শা, কাকুরিয়া, কয়ারপুর, রাজাপুর, বীরবাগারী, নাগপুর, ঝিনারীসহ আশেপাশের কৃষকরা আসছেন খড় ক্রয় করতে। ট্রলি ও ভ্যান নিয়ে এসেছেন তারা।
বীরকামট খালী গ্রামের কৃষক মোসলেম উদ্দিন, লোহিতপুর গ্রামের কৃষক আলামিন বলেন, 'আমাদের খড় (খড়) শেষ হয়ে গেছে। তাই দেওয়ানগঞ্জ বাজারে এসেছি খড় (খড়) কিনতে। বড় দুই আটি কিনেছি ৫ শত টাকায়।'
বিরাশী গ্রামের কৃষক কাজল বলেন, 'খড় নাই। গরু নিয়ে পড়ছি দুশ্চিন্তায়। তাই দেওয়ানগঞ্জ বাজারে খড় (খড়) কিনতে এসেছি। ২টি আটি কিনেছি চারশ টাকায়।'
খড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী বিরাশি গ্রামের এয়াজদর, আলতাব হোসেন, কুর্শা গ্রামের তোফাজ্জল, খালেক, জাহাঙ্গীর, ইসলাম, রব্বানী ফকিরা, হাটশিরা গ্রামের মিলন মিয়া, হুমায়ুন কবিরসহ অনেকেই জানান, 'বর্তমান খড়ের ব্যবসা করে আমাদের ভালোই লাভ হচ্ছে। সংসারও চলছে ভালো। তিন মাসের জন্য এ ব্যবসা চলবে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত।'
তারা আরও জানান, বিভিন্ন গ্রাম থেকে বড় গৃহস্থের বাড়ি থেকে তারা খড় কিনে আনেন। প্রতিটি আটি ২শ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার খড় বিক্রি হয় প্রতিটি ব্যবসায়ীর।
দেওয়ানগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় খারুয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, 'নান্দাইলের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাজার হলো দেওয়ানগঞ্জ বাজার। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এ বাজার বেশ প্রসিদ্ধ। এখানে বসেছে খড়ের হাট। স্বল্পকালীন এই সময়ের ব্যবসা করে অনেক লাভবান হচ্ছেন বিক্রেতারা। উপকৃত হচ্ছেন কৃষকরা। আশপাশের মধ্যে একমাত্র খড় বিক্রির হাট এটি।'
এসআর