এইমাত্র
  • অ্যাশেজসহ টিভিতে আজকের খেলা (৭ ডিসেম্বর ২০২৫)
  • মেসির জোড়া অ্যাসিস্টে এমএলএসে ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন মায়ামি
  • তুরস্কে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৭, আহত ১১
  • লেবাননে জাতিসংঘ টহল দলের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬
  • ভারতের পর্যটনরাজ্য গোয়ার নাইটক্লাবে বড় অগ্নিকাণ্ড, নিহত ২৩
  • রায়েরবাজারে অজ্ঞাত ১১৪ জুলাই শহীদের মরদেহ উত্তোলন শুরু আজ
  • আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা
  • মানবতাবিরোধী অপরাধে ইনুর মামলায় আজ তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য
  • ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা, কবে-কখন কার সঙ্গে কার ম্যাচ
  • যারা এতদিন নির্বাচনের জন্য পাগল ছিলেন, তাদের এখন ভিন্ন সুর: জামায়াত আমির
  • আজ রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ঘুষ, মামলা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি- কী নেই আশুলিয়া থানার ওসির সম্ভারে!

    শামীম হাসান সীমান্ত, আশুলিয়া প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
    শামীম হাসান সীমান্ত, আশুলিয়া প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম

    ঘুষ, মামলা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি- কী নেই আশুলিয়া থানার ওসির সম্ভারে!

    শামীম হাসান সীমান্ত, আশুলিয়া প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম

    রাজধানীর সাভারের আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে ঘুষ, মামলা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও পোস্টিং বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা পর্যন্ত অভিযোগ করেছেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির এমন নজির সাম্প্রতিক সময়ে বিরল। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ঘুষ, মামলা, চাঁদাবাজি, পোস্টিং- কোনোটিই বাদ নেই এই ওসির সম্ভারে।

    জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। তার প্রভাব পড়ে আশুলিয়াতেও। একে একে বিভিন্ন অভিযোগে ক্লোজড হতে থাকেন আশুলিয়া থানার বেশ কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। মাত্র চার মাস আগে, গত ২৫ জুন ওসি আব্দুল হান্নান যোগ দেন আশুলিয়া থানায়। তার আগে এ থানার চারজন ওসি আবু বক্কর, নুরে আলম ফকির, সোহরাব হোসেন ও মনিরুল ইসলাম ডাবলু বিভিন্ন অভিযোগে ক্লোজড হন। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পেয়ে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পান ওসি হান্নান।

    থানায় যোগদানের পরপরই তিনি নিজের পছন্দের কর্মকর্তাদের পোস্টিং করাতে থাকেন। তার পছন্দের কর্মকর্তাদের আশুলিয়ায় নিয়ে এসে শুরু হয় অর্থ বাণিজ্যের নানা অধ্যায়।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকাকালীন আমাকে কুকুরের মতো খাঁটিয়েছেন। আমার একটাই অপরাধ- আমি আওয়ামী লীগের লোককে ধরে তাকে টাকা কালেকশন করে দেই না। আমাকে তিনি তাড়াতাড়ি বদলি করিয়েছেন।’

    তিনি আরও বলেন, ‘ওসি আব্দুল হান্নান একজন স্বার্থপর পুলিশ কর্মকর্তা। বিভিন্ন সেক্টর থেকে তিনি অর্থ নিয়ে থাকেন। তার টাকা কালেকশন করার জন্য আলাদা লোক রয়েছে।’

    অনুসন্ধানে জানা যায়, ওসি হান্নান তার আপন বোনজামাইকে অবৈধভাবে নেওয়া ঘুষের টাকা সরাতে ব্যবহার করেন। তার ব্যবহৃত পুলিশের গাড়িটি দুলাভাইও ব্যবহার করেন। তার দুলাভাই সারাদিন তার অফিস কক্ষে বসে থাকেন এবং ওসি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় তদন্তে যান।

    আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর বা হালকা ধারার মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়, যাতে তারা সহজে জামিন পেতে পারেন। এসব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা না করায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বিভিন্ন জেলায় বদলি করানো হয়েছে।

    শুধু তাই নয়, আশুলিয়ার জুয়ার আসর, অবৈধ মাটি কাটা, সরকারি জায়গা দখলসহ প্রায় সব অবৈধ কার্যক্রম থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এসব টাকার মাঠপর্যায়ের সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন এক আব্দুল হামিদ নামের ব্যক্তি, যিনি থানার বাইরে থেকে কাজ করেন এবং সরাসরি ওসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

    ওসি হান্নান নিজের সুবিধার জন্য একটি ‘সিভিল টিম’ও তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার পছন্দমতো কর্মকর্তাদের নিয়ে এই টিম আশুলিয়া থানায় কাজ করছে। পাশাপাশি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে বদলি বাণিজ্যও চালান তিনি।

    পুলিশের এক এসআই বলেন, ‘ওসি আব্দুল হান্নান প্রথম যখন আশুলিয়া থানায় যোগদান করেন, কনস্টেবল থেকে শুরু করে সবাইকে আগে সালাম দিয়ে কথা বললেও বর্তমানে সেই চিত্র পাল্টে গেছে।’

    ওসি আব্দুল হান্নানের সাবেক বডিগার্ড নুরনবি বলেন, ‘হামিদ নামের একজন প্রায় সময় দেখতাম ওসি স্যারের রুমে বসে থাকতেন। তারা গোপনে সব কথাবার্তা বলতেন। আমাকে ৯ মাসের মধ্যে পোস্টিং করে দিয়েছেন সিলেটে।’

    সুমন নামের একজন বলেন, ‘আমার একটি কাজের জন্য ওসি সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কাজটি করে দিলে বিনিময়ে তাকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে।’

    যুবদলের এক নেতা বলেন, ‘ওসি সাহেবের বন্ধুুর মাধ্যমে কথা হয়েছে, প্রতি মাসে তার মাসোহারা পাঠিয়ে দিব। আর ৫০ হাজার টাকা তাকে মাত্র পাঠিয়ে দিলাম।’

    আশুলিয়া থানা থেকে পোস্টিং হওয়া এক কর্মকর্তা আফসোস করে বলেন, ‘আমি এত ভালো কাজ করলাম, তবুও ওসি স্যার নিজের কাছের অফিসারকে আনার জন্য আমাকে সরিয়ে দিল। আমি তো আর অন্যদের মতো তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে পারি নাই।’

    পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওসি আব্দুল হান্নান প্যাকেট ছাড়া কিছু বুঝে না। তাকে যারা টাকা দিতে পারেন, তিনি তাদেরকে পছন্দ করেন। ভালো ভালো এসআইদের তিনি সরিয়ে দিচ্ছেন।’

    অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমি কোনো মামলা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নই। আমি কাউকে পোস্টিং করাইনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখে।’

    নিজের বোনজামাইকে সঙ্গে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে ওসি হান্নান বলেন, ‘আমি একা থাকতে পারি না। একা থাকতে ভয় পাই। তাই আমার আপন বোনজামাইকে নিয়ে আসছি। তিনি আমার কাছে থাকেন।’

    ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পোস্টিং পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে তার বোনজামাই যদি থানায় থাকে, সেটি ঠিক নয়। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

    এসকে/আরআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…