সাত বছর আগে যে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে শওকত আলী (৪২) প্রবাসের অচেনা পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন, আজ সেই পথই তাকে ফিরিয়ে আনলো নীরব, নিথর এক কফিনবন্দি রূপে। সৌদি আরবের হিমঘর থেকে যেন বরফ-শীতল এক শোকের বার্তা নিয়ে এলেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় একটি ফ্রিজিং গাড়িতে প্রবাসী শওকত আলীর মরদেহ পৌঁছায় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার শৈলমারী গ্রামের বাড়ি। পরে যোহরের নামাজ পর জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরআগে ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে সৌদিআরব থেকে দেশে এসে পৌঁছায় তার মরদেহ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের শৈলমারী গ্রামের মৃত মনছুর আলীর ছোট ছেলে শওকত আলী। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে, অভাবের রাশ টানতে সাত বছর আগে তিনি গিয়েছিলেন মরুর দেশে।
শেষবার ছুটিতে এসেছিলেন ২০২২ সালের নভেম্বরে। সেদিন হয়ত কেউই জানতো না, এটিই হবে প্রিয়জনের সাথে তাদের শেষ জীবন্ত সাক্ষাৎ।
গত ৭ অক্টোবর সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে কর্মস্থলে কাজ করার সময় আকষ্মিক স্ট্রোকজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই স্বজনদের ঘুম কেড়ে নেয় অনিশ্চয়তা। তারা অপেক্ষায় ছিলেন, প্রিয় মানুষটির শেষ মুখটুকু একটিবার দেখার জন্য।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুল্যান্সে কফিনে মোড়ানো শওকত আলীর মরদেহ বাড়িতে আসার পর শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবারটিতে। কান্নায় ভেঙে পরে পুরো গ্রাম। মারা যাওয়ার দীর্ঘদিন পর গ্রামের ছেলের মরদেহ দেখতে নিহতের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন গ্রামবাসী।
শওকত আলীর বড় ভাই জাকির মোল্যা বুকফাটা আর্তনাদ চেপে বললেন, ‘মৃত্যুর খবরের পর থেকে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। মরদেহ না পাওয়াতে শোক বেড়ে আরও দ্বিগুণ হয়। শত বাধাবিপত্তি আর অক্লান্ত পরিশ্রম করে মৃত্যুর ২৩ দিন পর মরদেহ দেশে আনতে পেরেছি। ভাইকে দাফন করেছি কবরস্থানে। আর কোনো কিছু চাওয়ার নেই।’
বুড়াইচ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব পান্নু মিয়া বলেন, ‘শওকত আলীর মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক। যে প্রবাসী দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে, তার শেষ বিদায় যেন এত কষ্টের না হয়।’
এসএম