সৌদি রিয়ালের প্রলোভনে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ব্যবসায়ী মো. বিদ্যুৎ সরকার। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে তিনি হারিয়েছেন তিন লাখ টাকা। ঘটনার পর তিনি হতবাক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। টাঙ্গাইল পৌর শহরের ল্যাবজোন ক্লিনিক এলাকার সামনে প্রতারক চক্রটি তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ সরকার সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে তার ভূঞাপুর বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক অপরিচিত ফেরিওয়ালা আসে। সে তার হাতে থাকা একটি সৌদি রিয়াল দেখিয়ে জানতে চায়, এটি চালানো যাবে কিনা।
বিদ্যুৎ সরকার বলেন, আমি তাকে বলেছিলাম, ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ ছাড়া এই টাকা চালানো সম্ভব নয়। তখন তিনি বলেন তাঁর বাড়ি ফরিদপুর, টাঙ্গাইল শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন কয়েকজন। তাঁর এক সহকর্মী রিয়ালগুলো কুড়িয়ে পেয়েছেন। এখন তাঁরা এগুলো কোথায় ভাঙাবেন বুঝতে পারছেন না।
বিদ্যুৎ সরকার আরও বলেন, ফেরিওয়ালা নানা কৌশলে রিয়াল বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে লোভ দেখায়। তিনি সন্দেহ দূর করতে সৌদি ফেরত খালাত ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যার আগামী সপ্তাহে আবারও সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। পরে সেই খালাত ভাই বলেন, যদি রিয়াল আসল হয়, তাহলে কিনতে পারো।
পরদিন সকালে ফেরিওয়ালা আবার যোগাযোগ করে। জানায়, ৩০ টাকা দরে সব সৌদি রিয়াল বিক্রি করবে। খালাত ভাইয়ের পরামর্শে বিদ্যুৎ সরকার তিন লাখ টাকা ধার, দেনা করে জোগাড় করেন। বুধবার বিকেলে তিনি খালাত ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নির্ধারিত স্থান টাঙ্গাইলের ল্যাবজোন ক্লিনিকের পাশে পৌঁছান। সেখানে আগেই উপস্থিত ছিলেন চারজন ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয় এবং ফেরিওয়ালা একটি ব্যাগে থাকা সৌদি রিয়াল দেখায়।
কিছুক্ষণ পর ফেরিওয়ালা সেই ব্যাগটি বিদ্যুৎ ইসলামের হাতে তুলে দেয়। তিনি ব্যাগটি হাতে নিয়ে সামনে এগোতেই ফেরিওয়ালা সটকে পড়ে। সন্দেহবশত ব্যাগ খুলে দেখেন, ভেতরে কোনো রিয়াল নেই, কেবল কাগজে ভরা। প্রতারকের দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তখনই বিদ্যুৎ সরকার বুঝতে পারেন, প্রতারকচক্রের ফাঁদে তিনি পড়ে গেছেন।
ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ সরকার এখন অর্থ হারানোর পাশাপাশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তিনি বলেন, একজন সচেতন মানুষ হয়েও মানবিক কারণে আমি বিশ্বাস করেছিলাম মানুষটাকে, এখন সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার তিন লাখ টাকায় কতজনের পাওনা ছিল, কীভাবে সামলাব জানি না। আমি চাই প্রতারকচক্রকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দ্রুত বিচার হোক, না হলে আমার মতো আরও কত মানুষ কাঁদবে, তা কে জানে।
এ ঘটনায় বুধবার রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় সালাম নামের ওই ফেরিওয়ালাকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তভার পেয়েছেন থানার এসআই আবুল বাশার।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল বাশার বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত বাদীকে পাওয়া যায়নি। তাকে ফোন করে থানায় আসতে বলেছি। অনেক তথ্যের ঘাটতি রয়েছে, পূর্ণ তথ্য না পেলে তদন্ত কঠিন হবে।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানবীর আহাম্মেদ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে আমি এখনও অবগত নই। প্রতিদিন এত অভিযোগ আসে, সবগুলোই খেয়াল রাখতে পারিনা।
এসকে/আরআই