এইমাত্র
  • পেঁয়াজ আমদানি শুরু, এক লাফে প্রতিকেজিতে দাম কমল ৩০ টাকা
  • দেশে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন খালেদা জিয়া: মেডিকেল বোর্ড
  • খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান সম্পন্ন, রিপোর্ট নরমাল: মেডিকেল বোর্ড
  • হাড় কাঁপাতে ধেয়ে আসছে শৈত্যপ্রবাহ ‘পরশ’
  • গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বেগম জিয়ার অসাধারণ অবদান ছিল: মান্না
  • রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আমার নামে মামলা হয়েছে: শিশির মনির
  • দুপুরে সংবাদ প্রকাশ, বিকেলে সিলগালা নকল ঔষুধের কারখানা
  • বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম, আগামীকাল থেকে কার্যকর
  • ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনীত টাঙ্গাইল শাড়ি
  • আনোয়ারায় অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতালে প্রশাসনের অভিযান, দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  • আজ রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সাতকানিয়ায় আইন বিক্রি হচ্ছে মাসিক চাঁদায়

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৭ পিএম

    সাতকানিয়ায় আইন বিক্রি হচ্ছে মাসিক চাঁদায়

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৭ পিএম

    চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের ব্যস্ততম অংশ কেরানীহাট। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার যানবাহন ছুটে চলে এই স্টেশন দিয়ে। কিন্তু এখন এ পথের যাত্রী ও চালকদের মুখে একটাই অভিযোগ—সড়কে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি, টোকেন বাণিজ্য, আর অবৈধ গাড়ির রমরমা চলাচল।

    সাতকানিয়ার পরিবহনচালকদের অভিযোগ, কেরানীহাট ট্রাফিক বক্সে ‘টোকেন’ এখন পুলিশেরই এক রকমের পণ্য। প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়—কেউ ৫০০, কেউ ৭০০, আবার কারও কাছ থেকে আদায় হয় হাজার টাকার বেশি। এরপর চালকদের দেওয়া হয় বিশেষ টোকেন। এই টোকেন দেখালেই আর পুলিশ তাদের থামায় না, মামলা দেয় না, গালাগালও করে না। কিন্তু যাদের কাছে এই টোকেন নেই, তাদের জন্য শুরু হয় হয়রানির পালা।

    ভুক্তভোগী চালকরা বলছেন, কেরানীহাট ট্রাফিক পুলিশ বক্স এখন যেন এক প্রকার ‘টোকেন সিন্ডিকেট অফিস’। প্রতি গাড়ি থেকে মাসে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যাদের কাছে এই টোকেন নেই, তাদের গাড়ি আটক, মামলা কিংবা হয়রানি—এই তিনের একটিতে পড়তে হয়।

    গতকাল (৩০ অক্টোবর) ঠাকুরদিঘী এলাকায় প্রায় শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা চালক হঠাৎ সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দশ মিনিট চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সাতকানিয়া থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের দুটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে চালকদের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।

    অবরোধে অংশ নেওয়া চালক মো. এহছান বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিনে ৭০০–৮০০ টাকা রোজগার করি। কিন্তু মাসে মাসে ট্রাফিক পুলিশকে ৫০০–৭০০ টাকা না দিলে গাড়ি চলাতে দেয় না। কখনও চাবি নিয়ে বসে থাকে, কখনও মামলা দেয়। অথচ যারা টোকেন দেয়, তাদের গাড়ি ভিআইপি সার্ভিস পায়।’

    অন্য এক চালক মো. বাপ্পী বলেন, “এটিএসআই শাহীন ভাই লোহাগাড়া থেকে বদলি হয়ে এসেছেন। এসেই শুরু করেছেন নতুন নিয়ম—‘টোকেন ছাড়া গাড়ি চলবে না’। এখন প্রতিটি গাড়িকে মাসে টাকা দিতে হয়। আমরা না দিলে মামলা খেতে হয়। যে পুলিশ জনগণের সেবা করার কথা, তারা এখন বাণিজ্য করছে।”

    চালক আবুল হাসেম বলেন, ‘আমার গাড়ি নতুন। সব কাগজ ঠিক থাকার পরও শাহীন আমাকে থামিয়ে টোকেনের কথা জিজ্ঞেস করেন। আমি কীসের টোকেন তা জানতে চাইলে তিনি আমাকে মামলার ভয় দেখান। এরপর ৫০০ টাকা দাবি করেন, এবং টাকা না দিলে গাড়ির চাবি রেখে দেন।’

    চালকদের মতে, এই টোকেন আসলে একধরনের মাসিক ‘চাঁদা কার্ড’। কেউ না দিলে পুলিশ গাড়ি আটকায়, মামলা দেয়, কিংবা ‘থানায় পাঠানোর’ ভয় দেখায়।

    তারা বলেন, ‘যারা টোকেন নেয় তারা রাস্তায় সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু যাদের টোকেন নাই, তাদের গাড়ি এক মিনিটও দাঁড়াতে দেয় না। এভাবে চললে আইন কোথায়?’

    একজন চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই টোকেন বাণিজ্যের পেছনে শুধু শাহীন না, আরও কয়েকজন আছে। কিন্তু সবাই জানে, মুখ খুললে বিপদ।

    কেরানীহাট বাজারের এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন এটিএসআই এসে কীভাবে পুরো ট্রাফিক বাণিজ্য চালায়? নিশ্চয়ই উপরমহলের মদদ আছে।

    অভিযুক্ত এটিএসআই শাহীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি শুধু অবৈধ ও বিশৃঙ্খল গাড়িগুলোকেই আটক করি। কোনো ধরনের টোকেন বাণিজ্যের সঙ্গে আমি জড়িত নই। লোহাগাড়ায়ও কাগজপত্রবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। ক্ষুব্ধ কেউ কেউ তাই মিথ্যা অভিযোগ করছে।’

    কেরানীহাট পুলিশ বক্সের ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা কোনো টোকেন বাণিজ্যে জড়িত নই। এটিএসআই শাহীন সদ্য লোহাগাড়া থেকে বদলি হয়ে এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আজই শুনেছি।’

    এসএম

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…