এইমাত্র
  • নতুন বাবরি মসজিদের জন্য একজন একাই দিচ্ছেন ৮০ কোটি টাকা
  • ৪ নারী পাচ্ছেন বেগম রোকেয়া পদক
  • নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনে কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত, প্রধান উপদেষ্টাকে জানালেন সিইসি
  • ইরানে ম্যারাথনে হিজাব লঙ্ঘনের অভিযোগে আয়োজক গ্রেফতার
  • সৌদিতে এক সপ্তাহে ১৯ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
  • ইসরায়েলের রাজনীতি থেকে কী সরে দাঁড়াচ্ছেন নেতানিয়াহু
  • পেঁয়াজ আমদানি শুরু, এক লাফে প্রতিকেজিতে দাম কমল ৩০ টাকা
  • দেশে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন খালেদা জিয়া: মেডিকেল বোর্ড
  • খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান সম্পন্ন, রিপোর্ট নরমাল: মেডিকেল বোর্ড
  • হাড় কাঁপাতে ধেয়ে আসছে শৈত্যপ্রবাহ ‘পরশ’
  • আজ রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজ

    অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

    মাহফুজ রহমান, জয়পুরহাট প্রতিনিধি প্রকাশ: ১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
    মাহফুজ রহমান, জয়পুরহাট প্রতিনিধি প্রকাশ: ১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬ এএম

    অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

    মাহফুজ রহমান, জয়পুরহাট প্রতিনিধি প্রকাশ: ১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬ এএম

    অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। বারবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। আজও বহাল তবিয়তে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবু বক্কর সিদ্দিক ২০২১ সালের ১৮ মার্চ জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। একই সঙ্গে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি একই বছরের ৫ অক্টোবর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন।

    তিনি প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরই অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতা শুরু করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজের লাইব্রেরিতে বই কেনার নামে হাজার হাজার টাকার ভাউচার দেখালেও বই কেনেন না। ওই টাকা তিনি আত্নসাৎ করেন। ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রারে বইয়ের নাম তুলতে রাজী না হওয়ায় দায়িত্বরত কর্মচারী আবেদা সুলতানাকে চাকরিচ্যুত করেন।

    কলেজে অনলাইন পেমেন্ট চালু থাকার পরেও ছাত্রীদের কাছে থেকে বিনা রশিদে অতিরিক্ত টাকা নেন। এমনকি, আদায়কৃত অর্থ কোনো ব্যাংকে জমা না করে অধ্যক্ষ নিজেইে আত্নসাৎ করেন।

    কলেজের বিজ্ঞান ভবনের একটি ডরমেটরি দখল করে অধ্যক্ষ সেখানে বিশ্রামাগার বানিয়েছেন। তিনি অনিয়ম করে এসি, ফ্রিজ, সোফাসহ আসবাবপত্র কিনেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্র ফি এর টাকা আত্মসাৎ করারও।

    এছাড়াও ছাত্রীদেরকে বোরখা-বিরূপ মন্তব্য করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। ছাত্রীদের বোরকা পরে কলেজে আসতে নিষেধ করেছিলেন। এমনকি পরবর্তীতে বোরখা পরে আসলেও তা খুলে রেখে কলেজের পোশাক পরে শ্রেণি কক্ষে প্রবেশের নিয়ম করেছিলেন তিনি।

    ছাত্রীরা ওইসময় প্রতিবাদ করলে তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার হুমকি দিয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করেন অধ্যক্ষ আবু ব্ক্কর সিদ্দিক। একই সঙ্গে কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও স্টাফদের বিভিন্ন অজুহাতে শোকজ ও সতর্কীকরণ চিঠি দেন। এমনকি এসিআর খারাপ দেওয়ার ভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

    প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা তার কাছে জরুরী প্রয়োজনে নৈমিত্তিক ছুটি (সিএল) ছুটি চাইলে তিনি আমাদের ছুটি দেন না। ছুটি না পেয়ে প্রতিষ্ঠানে না আসলে তিনি নোটিশ করেন। তার কথা মতো কাজ না করলে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাউশিতে চিঠি পাঠানোর হুমকি দেন। এমনকি কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে চিঠি পাঠিয়েছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অনেক শিক্ষক এখানে থাকতে না পেরে বদলি হন। আবার অনেকেই বদলি হতে চান।’

    তারা বলেন, ‘কলেজের একটি পুকুর শিক্ষক সমিতির নামে ছিল। কিন্তু তিনি আসার পর সেটি কলেজের অর্থ থেকে চাষ করেন। সেখানকার মাছগুলো আমাদের জোর করে দিয়ে টাকা নেন। কলেজের বেশ কয়েকটি গাছ বন বিভাগের অনুমতি ও টেন্ডার ছাড়া বিক্রি করেন। সেই টাকা কলেজের ফান্ডে জমা করেননি। সেসময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে তার অনিয়ম-দুর্নীতি চাপা দিতেন। এরপর থেকে তিনি ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এখন আবার বিএনপি নেতা এবং জামায়াত নেতারা তার লোক বলে ভয় দেখান ‘

    এইচএসসি পাশ করা সানজিদা খাতুন, শ্রাবন্তী, প্রজ্ঞাসহ কয়েকজন ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের পোশাকে লাগানোর জন্য কলেজের মনোগ্রাম দেওয়া হতো, সেটিতে অতিরিক্ত টাকা নিতো। প্রশংসাপত্র, সার্টিফিকেট ও মার্কশিট উত্তোলনের সময় একশো-দুইশো টাকা নেওয়া হতো। কিন্তু কলেজ থেকে এসবের কোন রশিদ দিতো না। এমনভাবে সব ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। কলেজ হোস্টেলে ছাত্রীদের জন্য কেনা ফ্রিজ অধ্যক্ষ স্যার নিজে ব্যবহার করেন। হোস্টেলে অধ্যক্ষ স্যারের ছেলের জন্মদিনে আমাদের নিয়ে জোর করে পালন করেছেন।’

    কলেজের তৎকালীন লাইব্রেরির দায়িত্বে থাকা কর্মচারী মোছা. আবেদা সুলতানা বলেন, ‘কলেজের লাইব্রেরিতে বই কেনার ভাউচার দেখালেও বই কেনা হতো না। অধ্যক্ষ স্যার বই না দিয়ে লাইব্রেরির সংরক্ষিত রেজিস্ট্রারে বইয়ের নাম তুলতে বাধ্য করিয়েছেন। আমি এই কাজগুলোতে রাজি ছিলাম না। পরে আমাকে লাইব্রেরি থেকে অফিসে বসতে বলেন। আমি অফিসে বসতে রাজি ছিলাম না। তখন আরেকজন স্টাফ দিয়ে আমার থেকে চাবি নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয় ‘

    কলেজের তৎকালীন শিক্ষিকা খন্দকার সানজিদা ওহেদ জানান, অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় ছুটির আবেদন করলেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। সেসময় তিনি অসুস্থ থাকায় কলেজে আসতে না পারলে তার বেতন বন্ধ রাখাসহ মানসিকভাবে হয়রানি করা হয়। তার সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করেন অধ্যক্ষ।

    অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘কলেজে কোন টাকা আদায় করা হয়না। শুধু মনোগ্রামের টাকা নেয়া হয়, যেটা অনলাইনের সিস্টেম নাই। প্রশংসা পত্রের ক্ষেত্রে অফিস স্টাফরা ১শ টাকা করে নেয় যা মাস্টার রোলে কর্মচারীদের দেওয়া হয়।’

    তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে কোন খারাপ আচরণ করা হয়না। মাত্র দুজনকে উপযুক্ত কারণে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে যা অফিসিয়াল প্রসিডিউর মেনেই করা হয়েছে। এসিআর খারাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন হুমকি বা অনিয়ম করা হয়নি। কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক খন্দকার সানজিদা নিয়মিত কলেজ করতেন না, ঢাকায় থাকতেন। তাকে বার-বার কলেজে আসতে বললেও তিনি আসেন না। সেজন্য তার এসিআর বইয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে তদন্ত হয়েছে। তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি বিষয়টি সঠিক না।’

    ভাউচার থাকলেও লাইব্রেরিতে বই না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের রুমে এসি লাগানো হয়েছে, সেই টাকা ম্যানেজ করতে বই কেনা থেকে এবং অন্য খাত থেকে এদিক-সেদিক করা হয়েছে। লাইব্রেরি খোলা হয় না, বিষয়টি সঠিক না। দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে দায়িত্বরত আবেদা সুলতানা নিয়মিত লাইব্রেরি খুলতেন না। তিনি না বলে অফিসে আসতেন না।’

    তিনি বলেন, ‘আমাকে আওয়ামী লীগের লোক বলা হয়, অথচ আওয়ামী লীগের নেতারা আমাকে এই কলেজে আসতে দেয়নি। অনেক চেষ্টা করে অনেক বছর ঘুরে ঘুরে এখানে আসতে পেরেছি ‘

    তিনি বলেন, ‘আমি এখানকার স্থানীয় কলেজটাকে ভাল করতে চাই কিন্ত পারছিনা। শিক্ষকরা আমাকে সহযোগিতা করেন না। বলতে গেলে সব শিক্ষকরাই আমার বিপক্ষে।’

    ইখা

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…