টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মীরনগর নঙ্গিনা বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যহত হচ্ছে পাঠদানেও।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের দেয়াল ও ছাদে ফাটল, ভীমে ধস এবং বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টার খসে পড়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করছে। ইতোমধ্যে টিফিনের সময় একবার দুর্ঘটনাও ঘটেছে, যা অভিভাবক ও স্থানীয়দের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তারা নতুন ভবন নির্মাণের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে নাগরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস আবেদনটি যাচাই করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করে। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে ভবনটিকে “ঝুঁকিপূর্ণ” ঘোষণা করে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের সুপারিশ করে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস ও এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, আবেদনটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং পরবর্তী ধাপে প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনাধীন।
বর্তমানে বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ, যেখানে ৬ জন শিক্ষক ও ১৫২ জন শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করছে। তিন কক্ষবিশিষ্ট ভবনের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণভাবে অচল ও ব্যবহার অনুপযোগী। শিক্ষকদের জন্য আলাদা কক্ষ নেই, আসবাবপত্র রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থাও অনুপস্থিত। তাছাড়া বিদ্যালয়টির তিন পাশ ঘেঁষে রাস্তা থাকায় নিরাপত্তার জন্য বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও এলাকাবাসী বলেন, “মীরনগর নঙ্গিনা বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এলাকায় শিক্ষার একমাত্র আলোকবর্তিকা। সরকার যদি দ্রুত নতুন ভবন ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে দেয়, তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে এবং এলাকার শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহছানুল কবীর মকুল বলেন, “বিদ্যালয় ভবনের পাশ দিয়েই সব সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। তিন পাশ ঘেঁষে বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসেম্বলি শেষে এদিক–সেদিক ছোটাছুটি করে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা আর নিরাপত্তাহীন পরিবেশ — দুই মিলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে ক্লাস করছে। নতুন ভবন ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ এখন একান্ত প্রয়োজন।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক কুমার সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, “বিদ্যালয়টির অবস্থা সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি অচিরেই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে এবং নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।”
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়টি ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি এলাকার শত-শত শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে আসছে। এলাকাবাসীর আশা—সরকার দ্রুত বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
ইখা