চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় এখন চলছে ‘উন্নয়নের আগাম বার্তা’, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চলছে প্রকৃতির অজান্তে তার নিঃশব্দ মৃত্যু! অনুমোদন পাওয়ার আগেই বন বিভাগের উদ্যোগে সিইউএফএল সড়কের দুই পাশে শত শত গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা ও পরিবেশবাদীরা।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকেই চাতরী চৌমুহনী থেকে মেরিন একাডেমি পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো বিশালাকৃতির গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। বন বিভাগের দাবি এটি নিয়মিত নিলাম ও টেন্ডার প্রক্রিয়ার অংশ। অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এখনো সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আনুমানিক ১ হাজার ৮৮৫টি গাছ নিলামের মাধ্যমে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু অনুমোদনের আগেই এত বিপুলসংখ্যক গাছ কাটা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের মতে, প্রকল্পের নাম করে প্রভাবশালীরা গাছ বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ হোসেন বলেন, “প্রতি বছরই দেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে বন বিভাগের উচিত ছিল বনায়ন বাড়ানো। অথচ দেখা যাচ্ছে তারা উল্টো দিকেই হাঁটছে প্রকল্পের নামে প্রকৃতি ধ্বংস করছে।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাবেদ বলেন, “উন্নয়ন মানেই গাছ কাটা নয়। এই গাছগুলো শুধু ছায়া দেয়নি, বরং মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে তাপমাত্রা ও ধুলাবালু নিয়ন্ত্রণ করে। এটি পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের দৃষ্টান্ত।”
অভিযোগ রয়েছে, গাছ কাটার নিলাম প্রক্রিয়াকে আড়াল করে পাচার করা হচ্ছে অনেক গাছ। বন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সব গাছই নিলামের নিয়মে বিক্রি হচ্ছে।
রাঙ্গাদিয়া বিট কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া বলেন, “সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অনুরোধে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাতেই গাছ কাটার টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। আনোয়ারা, পটিয়া ও চন্দনাইশের বেশ কিছু স্থানে এই প্রক্রিয়া চলছে।”
অন্যদিকে সওজের (চট্টগ্রাম দক্ষিণ) নির্বাহী প্রকৌশলী পিটু লাল চাকমা সময়ের কন্ঠস্বর’কে বলেন, “আমরা কেবল বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছি গাছ কাটার জন্য। অনুমোদন পেলে শিগগিরই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু হবে। মন্ত্রণালয় থেকে এখনো টেন্ডার অনুমোদন আসেনি।”
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে,যখন কাজের অনুমোদনই হয়নি, তখন কেন গাছগুলো কাটা হলো?
বৈরাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইকবাল জানান, “আমরা প্রতিদিনই দেখছি গাছ কাটা হচ্ছে। অনেকে কাটা ডালপালা সংগ্রহ করছে। কিন্তু কবে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হবে কেউ জানে না। এটা যেন এক ধরনের আগাম ধ্বংসযজ্ঞ।”
এই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, “সড়ক সম্প্রসারণের অনুমোদন পাওয়ার আগেই যদি গাছ কাটা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উন্নয়নের নামে কেউ যেন পরিবেশের ক্ষতি না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন নজরদারি করছে।”
এর আগেও আনোয়ারার পারকি সৈকতে একইভাবে বন বিভাগের টেন্ডারের নামে শত শত ঝাউগাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। তখনও অভিযোগ উঠেছিল, টেন্ডারে দেখানো সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ বেশি গাছ কাটা হয়েছে যার ফলে সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বালুক্ষয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এসআর